লাহাইনা যখন বড় ধরনের হুমিকের মুখে পড়ে তখন দমকল কর্মীরা অন্য বড় দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিলেন।
Published : 12 Aug 2023, 06:31 PM
শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও পাশ দিয়ে যাওয়া একটি হারিকেনের জোরালো বাতাসে চলতি সপ্তাহে হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে অন্তত তিনটি দাবানল শুরু হয়। এগুলো দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শুকনো ঝোপঝাড়ের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
প্রথমে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কুলা শহরের ঝোপঝাড়ে আগুন লেগেছে বলে খবর আসে। শহরটি লাহাইনা থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, এর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে সকালে লাহাইনায় বিদ্যুৎ চলে যায়।
ওই সকালে ফেইসবুকে এক আপডেইট পোস্টে মাউই কাউন্টি জানায়, কুলার আগুনে কয়েকশত একর চারণভূমি পুড়ে গেছে, তবে লাহাইনায় ঝোপঝাড়ে লাগা তিন একরের একটি ছোট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
কিন্তু বিকালের মধ্যেই পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে ওঠে। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে লাহাইনার দাবানল হঠাৎ করেই তীব্র হয়ে ওঠে। এ সময় হোটেলের অতিথি পর্যটকদেরসহ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা সরে যেতে শুরু করেন।
পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় আগুন শহরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে কাউন্টি কর্তৃপক্ষ ফেইসবুকে একের পর এক এলাকা ছাড়ার নির্দেশ জারি করতে শুরু করে।
কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তারা আগাম নোটিশ তেমন একটা পাননি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই লাহাইনা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এমন শঙ্কায় আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানান তারা। বেশ কয়েকজন পাশের প্রশান্ত মহাসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন।
ওয়াশিংটনের আরবান ইনস্টিটিউটের জলবায়ু ও সম্প্রদায় বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু রামবাক জানান, পাহাড়কে পেছনে (দাবানল সেদিক থেকেই এসেছে) রেখে উপকূল বরাবর গড়ে ওঠার কারণে লাহাইনা থেকে বের হওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল, সবচেয়ে ভালোভাবে শহরটি থেকে বের হওয়ার শুধু দু’টি পথ আছে।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিষয়ের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, “এটাই হল দুঃস্বপ্নের দৃশ্য। কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরে দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরে যাওয়ার বিষয় বিবেচনায় ভালো বিকল্প তেমন একটা নেই।”
হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এমন সম্ভাবনাকে আমলে নেয়নি বলে মনে করেন অনেকে। এখন বিশ্বজুড়েই জরুরি সতর্কতার বার্তাগুলো মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ঘটনার সময় ওই এলাকায় মোবাইল ফোনের কোনো নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল না।
২০১৮ সালে হারিকেন লেন হাওয়াইয়ের দিকে এগিয়ে আসার সময় শুরু হওয়া দাবানলে মাউইর মোট ২৩৩০ একর এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। পরের বছর আরেক দাবানলে দ্বীপটির ২৫ হাজার একর এলাকা পুড়ে যায়। তারপরও গত বছর হাওয়াইয়ের জরুরি ব্যবাস্থাপনা সংস্থা তাদের একটি প্রতিবেদনে দাবানলে মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি ‘কম’ বলে উল্লেখ করেছিল।
হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন জানিয়েছেন, একইসঙ্গে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছিল, যখন লাহাইনা বড় ধরনের হুমিকের মুখে পড়ে তখন টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর দমকল কর্মীরা অন্য বড় দাবানলগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিলেন।
মাউই দ্বীপের পশ্চিম উপকূলীয় পর্যটন শহর লাহাইনাকে ধ্বংস করে দেওয়া ভয়াবহ এই দাবানলে মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিখোঁজের সংখ্যা হাজারের উপরে। মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
দাবানলে লাহাইনার হাজারেরও বেশি ভবন পুড়ে গেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এ সৈকত শহরটির ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ‘শেষ হয়ে গেছে’ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শহরটির পুনর্গঠনে কয়েক বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি বহু বছর লাগবে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: