দাবানলে লাহাইনা শহরের ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পুড়েছে প্রায় ১৭০০ ভবন।
Published : 11 Aug 2023, 08:29 PM
হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে ভয়াবহ দাবানলে মৃত্যু ছাড়িয়েছে অর্ধশত, ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে হাজারো বাসিন্দাকে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় পশ্চিম উপকূলীয় শহর লাহাইনা। এ সৈকত শহরের ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ‘শেষ হয়ে গেছে’। ঘরবাড়ি, হোটেল আর অন্যান্য স্থাপনা মিলিয়ে প্রায় ১৭০০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন এই দাবানলকে ‘হাওয়াইয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি ‘হৃদয়বিদারক’।
বিবিসি জানিয়েছে, দ্বীপটিতে এখনও আগুন জ্বলছে। উপর থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
হাওয়াইয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই দ্বীপের পশ্চিমাংশে রয়েছে বিশ্বখ্যাত সমুদ্র সৈকত। ওই অংশ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। শত শত বাড়ি পুড়ে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে, যাদের অধিকাংশই লাহাইনার বাসিন্দা।
মাউই দ্বীপে দাবানলের শুরু হয় মঙ্গলবার রাতে। মোটামুটি ১১০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে যাওয়া হারিকেন ডোরার বাতাসের তোড়ে অল্প সময়ের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ সপ্তাহের শুরুতে হাওয়াইয়ের দক্ষিণ পাশ দিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়।
শক্তিশালী ওই বাতাসের তোড়ে অগ্নিশিখা চারদিকে ছড়িয়ে বন্দরের সামনের পুরনো কোর্টহাউসসহ বেশিরভাগ ভবন ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বাতাসের কারণে আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ওড়ানোও শুরুর দিকে সম্ভব ছিল না।
হেলিকপ্টার পাইলট রিচার্ড ওলস্টেন বলেন, “অবস্থা ভয়ঙ্কর। ৫২ বছর ধরে আমি হাওয়াইয়ের আকাশে উড়েছি। এখনকার মত অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। আমাদের চোখে পানি চলে এসেছে।”
আগুনের আঁচ আর ধোঁয়া থেকে বাঁচতে উপকূলের অনেকে সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। আগুন ও ধোঁয়ায় আহত কয়েক ডজন বাসিন্দাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দাবানলে এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা কর্তৃপক্ষের জানা নেই। তাদের হিসাব অনুযায়ী, সংখ্যাটি ১ হাজারের মত। তাদের খুঁজতে উদ্ধার অভিযান চলছে।
লাহাইনা মাউই দ্বীপের একটি ঐতিহাসিক শহর। এর গোড়াপত্তন ১৭০০ সালের দিকে। ইউএস ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব হিস্টোরিক প্লেসেস’ এর তালিকায় রয়েছে এ শহরের নাম।
এ পর্যটন শহরের সুরম্য রিসোর্টের ২৭০টি ভবন পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে, যেখানে ১২ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্ম এই হাওয়াই দ্বীপে। দাবানলের ভয়াবহতা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (টুইটার) তিনি লিখেছেন, হাওয়াইয়ের যেসব ছবি আসছে, সেগুলোর কিছু দেখাও খুব কঠিন। অনেকের কাছে ওই জায়গাগুলো ছিল বিশেষ কিছু।
“প্রিয়জন বা প্রিয় সেই জায়গাগুলো যারা হারিয়েছে, যাদের জীবন ঝঞ্ঝার মধ্যে পড়ে গেছে, তাদের নিয়ে ভাবছি আমি আর মিশেল (ওবামার স্ত্রী)।”
আগুনে হাওয়াইয়ের অনেক প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যও ধ্বংস হয়ে গেছে। হাওয়াইয়ের সবচেয়ে পুরনো বটগাছটি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
৬০ ফুট উঁচু এ বটগাছটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো গাছগুলো একটি। ১৮৭৩ সালে হাওয়াইয়ের রাজা কামেহামেহার প্রাসাদের কাছে এটি রোপণ করা হয়েছিল। বুধবার দাবানল ওই এলাকা গ্রাস করলে বটগাছটিও পুড়ে ধূসর হয়ে যায়।
লাহাইনার ওয়েব সাইট বলছে, গাছটির উপরের অংশ পুরো পুড়ে গেছে। তবে শেকড় ঠিক থাকলে বটগাছটি আবার জেগে উঠলেও উঠতে পারে।
হাওয়াইয়ের লেফটেনান্ট গভর্নর সিলিভিয়া লিউক বলেছেন, লাহাইনা শহর ও দ্বীপের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও হিসাব করা যায়নি। তার ধারণা, ধ্বংসযজ্ঞের গোটা চিত্র পেতে মাসখানেক লেগে যেতে পারে।
আরও পড়ুন-