সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটে রিপাবলিকান পার্টির প্রত্যাশার চেয়ে অনেক খারাপ ফলাফল করার পেছনে ডনাল্ড ট্রাম্পের দায় অনেকখানি বলে মনে করেন তার দলের কয়েকজন নেতা।
যদিও ট্রাম্প এসব সমালোচনা খুব একটা বিবেচনায় নেন না। দলের নেতারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটে খারাপ ফলাফলের জন্য যতই তার ঘাড়ে দোষ চাপাক, তিনি চলেছেন আপন ইচ্ছায়।
মঙ্গলবার তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঠে লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিলেন।
এক দফা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পরের দফায় ভোটে হেরে ফের হোয়াইট হাউজে বসার এই তোড়জোড়কে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যদিও ট্রাম্পের সহযোগীরা বলছেন, তার এই ঘোষণা ও প্রচারাভিযান ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে বেশি মেলে।
সেবার আপাতদৃষ্টিতে ভোটে জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রথমে বাকি প্রার্থীদের সরিয়ে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পান এবং চূড়ান্ত ভোটে সে সময়ে তুমল জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হন।
রক্ষণশীল রিপাবলিকান দলের তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকদের কাছে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে ট্রাম্পের অতুলনীয় ধারণা রয়েছে বলেও মনে করেন তার সহযোগীরা।
তিনি খবরের শিরোনাম হতেও পারদর্শী। যা অন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে জনসাধারণের মনোযোগ তার দিকে সরিয়ে নেয়।
রেকর্ডবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা:
আট বছর আগেও রাজনীতিতে শূন্য অবস্থানে ছিলেন ট্রাম্প। সরকারি কোনো পদে থাকার রেকর্ড না থাকায় ভোটাররা তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষা তার কাছে সহজে তুলে ধরতে পারেন। তাছাড়া, অতীতের ত্রুটি আর ব্যর্থতা নিয়ে হওয়া সমালোচনার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ট্রাম্প ভোটে জিততে উচ্চাকাঙ্খি প্রতিশ্রুতি দিতেও পারদর্শী।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প তার চার বছরের মেয়াদে কর কমানো ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের মতো উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেছেন। কিন্তু তার কিছু বড় ব্যর্থতাও রয়েছে।
তিনি ডেমোক্র্যাটদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার প্রস্তাব বাতিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়াও, তিনি বার বার অবকাঠামোগত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও কখনো তা ফলপ্রসু হয়নি। রিপাবলিকানরা তার এসব অক্ষমতার কথা মনে রাখবে।
তার উপর ট্রাম্প যেভাবে করোনাভাইরাস মহামারী সামাল দিতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন তা নানা দিক থেকে তাকে আক্রমণের পথ খুলে দিয়েছে।
৬ জানুয়ারির প্রভাব:
ডনাল্ড ট্রাম্পকে কেবল প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি যেসব নীতি গ্রহণ করেছিলেন সেগুলো সংস্কারের পেছনে ছুটলেই হবে না। বরং প্রথম মেয়াদের শেষের মুহূর্তে তিনি যেভাবে নির্বাচন সামলেছেন এবং ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে তার সমর্থকদের আক্রমণে উসকানি দেয়াতে তার যে ভূমিকা সেটারও কারণ তাকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
পুলিশের টিয়ার গ্যাস উপেক্ষা করে সেদিন ট্রাম্প সরমর্থকেরা ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে আক্রমণ করে এবং ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে। যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সহজে ভুলবে না।
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ওই ঘটনার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে।
আইনি জটিলতা:
ট্রাম্প কেন আরেকবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছে বিবিসি।
যার অনেকগুলোর কারণের একটি হলো নিজের বিরুদ্ধে অপরাধ ও সেগুলোর তদন্তকে ঢেলে সাজানো।
বর্তমানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ, নিউ ইয়র্কে তার ব্যবসা ঘিরে জালিয়াতির মামলা, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মানহানির মামলা এবং ক্যাপিটল হিলের ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
এই তদন্তগুলোর যেকোনোটি পূর্ণাঙ্গ বিচারের দিকে যেতে পারে এবং সাময়িকভাবে ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের পরিকল্পনাগুলোকে ভেস্তে দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ যে পরিস্থিতি হতে পারে তা হলো, তার বিশাল অংকের জরিমানা বা জেল হওয়া।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষ:
আট বছর আগে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর দৌড়ে ফ্লোরিডার গভর্নর জেব বুশের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। জেব বুশকে সেসময় শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়েছিল। যদিও পরে ব্যাপক প্রচারাভিযান আর বুশ পরিবারের নাম তার কাজে আসেনি। এর কারণ ছিল রিপাবলিকানদের অভিবাসন আর শিক্ষা নীতি থেকে তার বের হয়ে যাওয়া।
ডনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে জন্য দলের মনোনয়ন পেতে ফের ফ্লোরিডার গর্ভনরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হতে পারে।
এ বছর ফ্লোরিডার পুনঃনির্বাচিত হওয়া গভর্নর রন দেসান্তিসের প্রতি রিপাবলিকান দলের শক্ত সমর্থন রয়েছে। রাজনীতির জাতীয় মঞ্চে তার পদচারণা না থাকলেও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ঊর্ধ্বমুখী।
যদিও রন দেসান্তিস রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার দৌড়ে নাম লেখাবেন কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
জনপ্রিয়তা:
ট্রাম্পের প্রার্থীতা ঘোষণার আগে কনজারভেটিভ দলের হয়ে একটি গ্রুপ একটি ধারাবাহিক জরিপ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, আইওয়া ও নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতায় রন দেসান্তিসের পেছনে রয়েছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে আগে ভোট হয়।
বয়সের ভার:
ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হলে শপথ গ্রহণের সময় তার বয়স হবে ৭৮ বছর। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়সও তাই। ফলে ট্রাম্প যদি সত্যিই জিতে যান তবে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু রিপাবলিকান মনোনয়ন পেতে যে কঠিন প্রচারাভিযানের মধ্য দিতে যেতে হয় এই বয়সে ট্রাম্প সেই চাপ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ট্রাম্পকে তার তুলনায় অনেক কম বয়সী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়তে হবে।
যদিও অতীতে তিনি অসাধারণ ধৈর্য দেখিয়েছেন, কিন্তু প্রত্যেক মানুষেরই তো ধৈর্যের সীমা আছে।