সামরিক আইন জারির ঘোষণা এবং চাপের মুখে তা প্রত্যাহারের পর প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এমপি’রা। ভোট হতে পারে শুক্র বা শনিবার।
Published : 04 Dec 2024, 05:01 PM
সামরিক আইন জারির ঘোষণা এবং চাপের মুখে তা প্রত্যাহারের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল এবার পার্লামেন্টে অভিশংসনের মুখে পড়েছেন। আইনপ্রণেতারা বুধবার তার বিরুদ্ধে বিল এনে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বিবিসি জানায়, অভিশংসন ভোট হতে পারে শুক্র কিংবা শনিবার। ছয়টি বিরোধীদল আগে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে একটি প্রস্তাব দেয়। এরপর এই প্রস্তাব বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নিয়মানুযায়ী, প্রস্তাবের ওপর ভোট হতে হবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই। সে অনুযায়ী ভোটাভুটি হতে হবে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) কিংবা শনিবারে (৭ ডিসেম্বর)।
কয়েক দশকের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে মঙ্গলবার টেলিভিশনে দেওয়া আকস্মিক এক ভাষণে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হাত থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সুরক্ষায় এবং রাষ্ট্রবিরোধী নানা শক্তিকে নির্মূল করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
পরে পার্লামেন্টের চাপের মুখে কয়েক ঘণ্টা পরই তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ইওল। তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা এবং গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টাকে পার্লামেন্ট পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে।
পার্লামেন্টের ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা একযোগে প্রেসিডেন্ট ইউনের জারি করা এ ডিক্রি প্রত্যাখ্যান করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানায়, বুধবার ভোর রাতেই মন্ত্রিসভা সামরিক আইন বাতিল করার বিষয়ে একমত হয়। এরপর বুধবার সকালে এমপি’রা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার আহ্বান জানান।
ইউন সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা রাজধানী সিউলের জাতীয় পরিষদ ভবনে প্রবেশ করেছিল। প্রেসিডেন্ট দপ্তর জানিয়েছে, ইউনের চিফ অব স্টাফ ও জ্যেষ্ঠ সচিবরা একযোগে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউন বলেছিলেন, পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া ও উত্তরপন্থি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো থেকে দেশকে ও এর অবাধ সাংবিধানিক বিধানকে রক্ষার জন্য সামরিক আইন দরকার। তবে ভাষণে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির কথা উল্লেখ করেননি।
প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারি ঘোষণার পরপরই হেলমেট পরা সশস্ত্র সেনারা জানালা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে আর উপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিতে শুরু করে। পার্লামেন্টের কর্মীরা অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র থেকে গ্যাস স্প্রে করে সেনাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। পার্লামেন্টের বাইরে প্রতিবাদকারীরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
সামরিক বাহিনী বলে, পার্লামেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশকদের সামরিক আইন কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্টের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন উপস্থিত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সামরিক আইন প্রত্যাহার করার একটি প্রস্তাব পাস করে। এদের মধ্যে ইওলের দলের ১৮ সদস্যের সবাই ছিলেন। প্রেসিডেন্ট তখন তার ঘোষণা বাতিল করতে বাধ্য হন।
জাতীয় পরিষদের বাইরে অবস্থান নেওয়া প্রতিবাদকারীরা চিৎকার করে হাততালি দিতে থাকেন। তারা ‘আমরা জিতেছি!’ বলে শ্লোগান ধরেন আর একজন ড্রাম বাজাতে থাকেন। বুধবার সন্ধ্যায়ও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে জনতার বিক্ষোভ চলছে।
বিরোধীদলীয় এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করুন আর নাই করুন, আমরা তাকে অভিসংশন করব।” এমপি’দের ভোটে অভিশংসন বিল অনুমোদন পেলে সাংবিধানিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবেন প্রেসিডেন্ট ইওল।