“এই বিমানবন্দর নিজেকে ১০০ শতাংশ রক্ষা করতে পারে না এবং সেবা বিঘ্নিত হওয়া আমাদের জন্য বড় ঘটনা,” বলছেন সেখানকার সিইও।
Published : 22 Mar 2025, 11:05 AM
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অচল হয়ে পড়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবারের সেখানে পুরোদমে পরিষেবা চালুর আশা রয়েছে।
কাছের একটি সাবস্টেশনে আগুনের পর ওই বিমানবন্দরে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ হ্রাস পেয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম লন্ডনের হেইসের নর্থ হাইড প্ল্যান্টে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ার পর অভ্যন্তরীণ বিমানগুলো ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সারাদিন ফ্লাইট বন্ধ থাকায় প্রায় দুই লাখ যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী থমাস ওল্ডবাই আটকে পড়া যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, “এই বিমানবন্দর নিজেকে ১০০ শতাংশ রক্ষা করতে পারে না এবং সেবা বিঘ্নিত হওয়া আমাদের জন্য বড় ঘটনা।”
মেট পুলিশ এই আগুনকে নাশকতা হিসেবে দেখছে না। তদন্তে বিদুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের আটটি দূরপাল্লার ফ্লাইটকে হিথ্রো ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা জরুরি ভিত্তিতে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়ে দেয়।
পরিবহন দপ্তর জানিয়েছে, রাত্রিকালীন ফ্লাইট ওড়ানোর ওপর যে বিধিনিষেধ রয়েছে, জট কমাতে তা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে।
সবশেষ অবস্থা জানতে যাত্রীদের তাদের এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সিইও ওল্ডবাই জানান, ব্যাক-আপ ট্রান্সফরমারও কাজ না করায় সুরক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী বিদ্যমান ব্যবস্থা বন্ধ করতে হয়েছিল, যাতে বাকি দুই সাবস্টেশন থেকে বিমানবন্দরের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার কানাডা এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সসহ বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস ঘোষণা করেছে, তারা হিথ্রো থেকে নির্ধারিত ফ্লাইট ফের চালু করবে।
বিমানবন্দরের এক মুখপাত্র বলেন, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর প্রথম ফ্লাইটগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল যেসব যাত্রীকে ইউরোপের অন্যান্য বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে ফেরানো... এবং উড়োজাহাজ স্থানান্তর করা।
ওল্ডবাই বলেন, “আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, এটি অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা। এটা কোনো ছোটখাটো আগুন নয়।
“মাঝারি আকারের শহরের সমান শক্তি আমরা হারিয়েছি এবং আমাদের ব্যাকআপ সিস্টেম যেভাবে কাজ করা উচিত, সেভাবে কাজ করেছে; তবে তা পুরো বিমানবন্দর চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।”
হিথ্রোর বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কোনো দুর্বল দিক আছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আপনি এটা বলতে পারেন, তবে নির্দিষ্ট আকারের বিভ্রাট থেকে আমরা অবশ্যই নিজেদের শতভাগ রক্ষা করতে পারি না এবং এটি তেমনই এক ঘটনা।
“আমি বলতে চাইছি, কেউ আহত না হওয়া ছাড়া- আমাদের বিমানবন্দরের জন্য যতো বড়ো হতে পারে, ততো বড় ঘটনা।”
এই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ওল্ডবাই বলেন, শনিবার বিমানবন্দরটি ‘শতভাগ কার্যক্রমে’ ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিবিসি লিখেছে, হিথ্রো যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম বিমান চলাচল কেন্দ্র, প্রতিদিন প্রায় ১৩০০ ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিমানবন্দরটির টার্মিনাল দিয়ে রেকর্ড ৮ কোটি ৩৯ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেছে।
পরিবহন মন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন- বিমানবন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি দ্রুত সামলেছেন।
“তারা জরুরি ভিত্তিতে সাড়া দিয়েছেন এবং এয়ারলাইন অপারেটরদের আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন; তাদের ব্যাকআপ এনার্জি সাপ্লাই আছে, জেনারেটর আছে, ডিজেল জেনারেটর আছে।
"এসবের কোনোটিই ব্যর্থ হয়নি, কারণ ব্যাকআপ সরবরাহ ব্যবস্থাটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়া যায় এবং সেটির কাজ পুরো বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়।”
আলেকজান্ডার বলেন, তিনি জ্বালানি মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং হিথ্রোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন যাতে বিমানবন্দরের বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে কোনো কিছু শেখার থাকলে তা শেখা।
এর আগে জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম জানিয়েছিল, তারা 'এই ঘটনার কারণ এবং কী শিক্ষা নেওয়া যেতে পারে' তা পর্যালোচনা করবে।
বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় ২৩টা ২০ মিনিটে জরুরি পরিষেবাগুলোকে প্রথমে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছিল।
সেই সময় বিমানবন্দরগামী প্রায় ১২০টি উড়োজাহাজকে অন্যখানে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় কিংবা তাদের উড্ডয়নস্থলে পাঠানো হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইঞ্জিন এবং প্রায় ৭০ জন দমকল কর্মীকে পাঠানো হয় জানিয়ে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড (এলএফবি) বলছে, বেলা সাড়ে ৬টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এলএফবি জানিয়েছে, ২৫ হাজার লিটার কুলিং ফ্লুইড ভর্তি একটি ট্রান্সফরমারে আগুন লেগেছিল। ঘটনার সময় সতর্কতা হিসেবে একটি বড় কর্ডন স্থাপন করা হয় এবং প্রায় ১৫০ জনকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
তাদের বেশিরভাগই সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ঘরে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে এলএফবি।
হিলিংডন কাউন্সিল জানিয়েছে, নিরাপদে বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত ১২ জনকে হোটেলে থাকতে তারা সহায়তা করবে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর ওই এলাকার ৬৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি ও বিমানবন্দর বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে, যদিও জাতীয় গ্রিড জানিয়েছে, বেলা ২টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, তাদের আলো নিভে যাওয়ার আগে তারা একটি উজ্জ্বল আলো দেখতে পান।
৫১ বছর বয়সী সবিতা কাপুর বলেন, প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শুনে তিনি আক্ষরিক অর্থেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে ফিরতে বলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে চলে যেতে বলেন।
কাপুর বলেন, রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় 'দ্বিতীয় বিস্ফোরণ' ঘটে এবং পুরো ভূমি কেঁপে ওঠে।
একটি পরিবার টেক্সাস থেকে ডালাসে বাড়ি ফেরার জন্য শুক্রবার সকালে হিথ্রোতে পৌঁছানোর পর চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ে।
অ্যান্ড্রু শ্রী, তার স্ত্রী এবং তাদের এক থেকে আট বছর বয়সী তিন সন্তান পূর্ব লন্ডনে তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
টার্মিনালে অপেক্ষার সময় তিনি বলছিলেন, “আমি শুধু আশা করি, তারা যাতে যথাযথভাবে হালনাগাদ তথ্য দেয়।”
“আমরা এখানে এসেছি এবং তারা আমাদের বলেছে, 'আসলে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে গেছে'; বিষয়টি কিছুটা হতাশাজনক।”