তাকে রাজপরিবার থেকে ‘সরিয়ে দিতে’ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা তার বাবা যে মেজর জেমস হিউইট তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, অভিযোগ ডিউক অব সাসেক্সের।
Published : 13 Jun 2023, 05:06 PM
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস তার আসল বাবা নন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই গুঞ্জন নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন প্রিন্স হ্যারি; তিনি জানিয়েছেন, এই গুঞ্জন বছরের পর বছর ধরে তাকে ভয়াবহ কষ্ট দিয়েছে।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার আদালতে দেওয়া এক সাক্ষ্যে ডিউক অব সাসেক্স আরও বলেছেন, তার আশঙ্কা, তাকে রাজপরিবার থেকে ‘সরিয়ে দিতে’ ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা তার বাবা যে মেজর জেমস হিউইট তা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজউইকে হ্যারির এ ভাষ্য ছাপা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
তাকে নিয়ে ডজনের বেশি প্রতিবেদন প্রস্তুতে ফোন হ্যাক করাসহ নানান অনৈতিক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ডিউক অব সাসেক্স এরই মধ্যে মিরর গ্রুপের পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তারই একটি, দ্য পিপলে ২০০২ সালে প্রকাশিত এক নিবন্ধের শিরোনাম ছিল, “হ্যারির ডিএনএ ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্র।”
ব্রিটিশ এ প্রিন্স বলছেন, তার মা জেমস হিউইটের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করার পর একাধিক পত্রিকা হিউইটই হ্যারির আসল বাবা, এই গুঞ্জনকে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
গুঞ্জনটি যে মিথ্যা, তা পুনর্ব্যক্ত করে হিউইটের সঙ্গে তার মা ডায়ানার সম্পর্ক যে তার জন্মেরও কয়েক বছর পর শুরু হয়েছিল, আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সে কথাই বলেন প্রিন্স হ্যারি।
“আমার জন্মেরও কয়েক বছর পর্যন্ত আমার মা আর মেজর হিউইটের দেখাই হয়নি, এ ধরনের গল্প বাদ দেওয়াই উচিত ছিল।
“আমার বয়স যখন ১৮, মাত্র ছয় বছর আগে মাকে হারিয়েছি, তখন এই্ ধরনের গল্পগুলো খুবই ক্ষতিকারক ও খুবই বাস্তব মনে হতো। এগুলো ছিল কষ্টদায়ক, নীচ ও নির্মম। গল্পগুলোর পেছনে কী উদ্দেশ্য, তা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থাকতো আমরা। এটা কি এমন যে পত্রিকাগুলো চেয়েছিল মানুষের মনের মধ্যে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে, যেন আমাকে রাজপরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয়?,” বলেন হ্যারি।
নিজের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্পেয়ারে’ও এই গুঞ্জনের বিষয়ে লিখেছিলেন হ্যারি। বলেছিলেন, চার্লস প্রায়শই তার আসল বাবা না হওয়া নিয়ে নিষ্ঠুর ও অদ্ভুত রসিকতা করতেন।
“গল্প বলতে পছন্দ করতেন বাবা, আর এটা ছিল তার সংগ্রহের অন্যতম সেরা। তিনি সমসময়ই দার্শনিক ঝলক দিয়ে শেষ করতেন। কে জানে আমি সত্যিকারের প্রিন্স অব ওয়েলস কিনা? কে জানে আমি সত্যিই তোমার বাবা কিনা?
“তিনি হাসতেন আর হাসতেন, যদিও এটি ছিল কিম্ভূতকিমাকার অদ্ভুত রসিকতা, তার মধ্যে আবার গুঞ্জন উঠেছিল আমার সত্যিকারের বাবা আমার মায়ের সাবেক প্রেমিকদের একজন—মেজর জেমস হিউট। একটা কারণ হতে পারে মেজর হিউটের চুল, আরেকটি কারণ হতে পারে অন্যকে নির্যাতন করে সুখ লাভের মানসিক বিকার বা স্যাডিজম। ট্যাবলয়েডের পাঠকরা এটা ভেবে আনন্দিত হতেন যে, প্রিন্স চার্লসের ছোট ছেলে আসলে তার ছেলেই নয়,” চলতি বছর ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত স্মৃতিকথায় এমনটাই লিখেছিলেন হ্যারি।
ইন্ডিপেন্ডেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর অশ্বারোহী বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হিউইটের সঙ্গে প্রিন্স হ্যারির মা ডায়ানার সম্পর্ক ছিল ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত। ডায়ানা সেসময় আইনত চার্লসের স্ত্রীই ছিলেন।
এদিকে হ্যারি জন্মান ১৯৮৪ সালে, হিউইটের সঙ্গে ডায়ানার দেখা হওয়ারও ২ বছর আগে।
২০১৭ সালে এই গুঞ্জন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন হিউইটও। হ্যারি তার সন্তান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “না, আমি নই।”