উত্তর প্রদেশের একটি জেলাতেই গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৬৮ জনের মৃত্যুর হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
Published : 19 Jun 2023, 07:46 PM
ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি জেলাতে চারদিনে ৬৮ জনের মৃত্যুর কারণ ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বিবিসি জানায়, উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌ থেকে ২৭৪ কিলোমিটার দূরের জেলা বালিয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৬৮ জনের মৃত্যুর হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যা নিয়ে রাজ্যে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে।
যার জেরে এসব মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্যানেল গঠন করে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ভারতের উত্তরের এই রাজ্যজুড়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রদাহ, গত সপ্তাহে রাজ্যের অনেক এলাকাতেই তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাপদাহের মধ্যে বয়স্কদের ঘরের ভেতর অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানায়, উত্তর প্রদেশে বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত শুক্রবার বালিয়া জেলা হাসপাতালের প্রধান দিবাকর সিং এর একটি বিবৃতি ঘিরে।
ওইদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার হাসপাতালে প্রায় ২৫ জন মারা গেছেন। এবং তাদের মৃত্যুর পেছনে তীব্র তাপদাহ ভূমিকা রেখেছে।
দিবাকর বলেন, ‘‘বেশিরভাগ রোগীর বয়স ৬০ ঊর্ধ্ব এবং তারা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মারাত্মক গরমে তাদের অসুস্থতা আরো বেড়ে যায় এবং তাদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া সত্ত্বেও তাদের মৃত্যু হয়েছে।”
পরদিন এই কর্মকর্তাকে বদলি করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী ব্রজেশ পাঠক বলেন, ডা. দিবাকর সিং ‘দায়িত্বজ্ঞনহীনের’ মত বিবৃতি দিয়েছেন। যদিও সরকার পরিস্থিতিকে ‘খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে’।
‘‘দুইজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ওই ঘটনার কারণ তদন্তে এবং প্রতিবেদন গঠন করতে পাঠানো হয়েছে।”
জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তার একজন এ কে সিং বলেন, বালিয়া জেলা হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মৃত্যুর পেছনে তাপদাহ কোনো ভূমিকা রেখেছিল কিনা তা তারা এখনই নিশ্চিত হতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আশেপাশের অন্যান্য জেলাতেও একই আবহাওয়া বিরাজ করছে। কিন্তু ওইসব জেলায় এত মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
‘‘এছাড়াও, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অতটা জ্বর হয়নি যেমনটা সাধারণত তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়া ব্যক্তিদের বেলায় হয়।”
তারা বলেন, তারা সংক্রমণের অন্যান্য সম্ভাব্য কারণও খতিয়ে দেখছেন। যেমন: পানিবাহিত কোনো সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল কিনা তারা তাও খতিয়ে দেখছেন।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা সবাই বালিয়া জেলার বাসিন্দা ছিলেন কিনা সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানায় বিবিসি।
মাত্র চারদিনে এত মৃত্যুর বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলা হয়, জনগণকে তাপদাহের বিষয়ে সতর্ক না করে সরকার ‘দায়িত্বজ্ঞনহীনতার’ পরিচয় দিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘যারা মারা গেছেন তারা সবাই দরিদ্র কৃষক। তারা যথা সময়ে খাবার, চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে এভাবে প্রাণ হারিয়েছেন।”
প্রতিবেশী বিহার রাজ্যেও গত ৩১ মে থেকে ভয়াবহ তাপদাহে ৪০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ পেয়েছে।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য তাপদাহের কারণে এত মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
বিহারের ডিজাস্টার কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. উমেশ কুমার বিবিসিকে বলেন, তারা মারাত্মক তাপদাহ জনিত কারণে মাত্র একজনের মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। ওই ব্যক্তি জাহানাবাদ জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
ভারতের উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে দাবদাহ খুবই নিয়মিত ঘটনা। বিশেষ করে মে ও জুন মাসে সেখানে তীব্র দাবদাহ দেখা যায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবদাহ এখন আরো বেশি মারাত্মক এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।