আফগানিস্তান সীমান্তের নিকটবর্তী খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের কুররাম জেলা কয়েক দশক ধরেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার একটি কেন্দ্র হয়ে আছে।
Published : 01 Dec 2024, 05:07 PM
পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় প্রাণঘাতী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহে একটি অস্থায়ী লড়াইবিরতি সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হয়নি। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা এখন ১৩০ জন ছাড়িয়ে গেছে আর কর্তৃপক্ষ একটি সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আফগানিস্তানের সীমান্তের নিকটবর্তী কুররাম কয়েক দশক ধরেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার একটি কেন্দ্র হয়ে আছে। গত মাসে সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হওয়ার পর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের নতুন ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ওয়াজিদ হুসেইন রয়টার্সকে জানান, গত দেড় সপ্তাহে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসন ও অন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই বন্ধে অনেক উদ্যোগ নিলেও এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।”
গত রোববার পাকিস্তান সরকারের একটি টিম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যস্থতা করে সাতদিনের এক লড়াই বিরতির ব্যবস্থা করে দেয়। কুররমের জমি ও অন্যান্য স্থানীয় বিরোধ নিয়ে সশস্ত্র শিয়া ও সুন্নি মুসলিমরা কয়েক দশক ধরে উপজাতীয় ও সম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বে লিপ্ত আছে।
প্রাথমিক হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়েছিল। ওই সময় প্রধানত শিয়া গাড়ি চালকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়েছিল। পরে প্রতিশোধমূলক সংঘর্ষে আরও বহু মানুষ নিহত হন। প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যা ৯৭ জন বলে জানিয়েছে।
খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন খান গান্ধাপুর শনিবার কুররাম এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে উপজাতীয় মুরুব্বি ও নেতাদের বড় একটি জমায়েতের উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।
শনিবার রাতে গান্ধাপুরের দপ্তর থেকে দেওয়া একটি বিবৃতি অনুযায়ী ভাষণে তিনি বলেছেন, “যে কেউ অস্ত্র তুলে নেবে তাকেই সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করা হবে আর তাদের পরিণতি একজন সন্ত্রাসীর মতোই হবে।”
নিরাপত্তা বাহিনী কুররামের দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মোতায়েন আছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুররমের প্রধান শহর শিয়া অধ্যুষিত পারাচিনার সঙ্গে প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ারকে সংযোগকারী প্রধান মহাসড়ক বন্ধ করে রেখেছে সুন্নি উপজাতিরা। এতে পারাচিনা থেকে পেশোয়ারের হাসপাতালগুলোতে আহত লোকজনকে নিয়ে যাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
পারাচিনার জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সৈয়দ মীর হাসান বলেন, “পেশোয়ার ও অন্যান্য স্থানের বড় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের পাঠাতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আমাদের মেডিকেল টিমগুলো অস্ত্রপচার করতে দিনরাত কাজ করে চলেছে।”
তিনি জানান, তারা এখন প্রায় ১০০ আহত রোগীর চিকিৎসা করছেন আর তাদের হাসপাতালে সহিংসতা চলাকালে ৫০টি লাশ আসে।