ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস আর সুপ্রিম কোর্টের মত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দেশটির চরম ডানপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর সমর্থকদের নজিরবিহীন তাণ্ডবের পর তাদের একটি অস্থায়ী শিবির ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচনে হার নিশ্চিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অনুসারীরা যে তাণ্ডব চালিয়েছিল রোববার ব্রাসিলিয়ায় যেন সেই একই নাটক মঞ্চস্ত হয়েছে।
ব্রাজিলের জাতীয় পতাকার হলুদ-সবুজ রঙের পোশাকে বোলসোনারোর হাজার হাজার সমর্থক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টে লঙ্কাকাণ্ড চালায়।
টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা বানের পানির মত সুপ্রিম কোর্ট ও কংগ্রেস ভবনে প্রবেশ করছে, স্লোগান দিচ্ছে, আসবাবপত্র ভাঙছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, নির্বাচনের পর থেকে দু’মাস ধরে যে টানটান উত্তেজনা চলছি ব্রাজিলে; তারই বিস্ফোরণ ঘটেছে রোববার।
অন্তত তিন হাজার মানুষ এই বিশৃঙ্খলায় অংশ নেয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের ধারণা। পুলিশের সাথে তারা সংঘাতেও জড়ায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তিন ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গ্রেপ্তার করা হয় অন্তত চারশজনকে।
রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বোলসোনারোর সমর্থকদের তাণ্ডবের পর ব্রাসিলিয়া সেনা সদরদপ্তরের কাছে কয়েকশ’ দাঙ্গা পুলিশ জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ ঘোড়ার পিঠে ছিলেন। ওই সময় ওই এলাকার সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় রোববারের তাণ্ডবের পেছনে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গত ১ জানুয়ারি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করা বামপন্থি নেতা লুলা দা সিলভা।
গত বছরের অক্টোবরের ভোটে লুলা সামান্য ব্যবধানে বোলসোনারোকে পরাজিত করেন।
বোলসোনারো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আছেন এবং তিনি দাঙ্গার বিষয়ে সমর্থকদের কোনও উসকানি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘দাঙ্গাবাজরা সীমা অতিক্রম করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বের অনেক নেতা রোববারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে করতে ব্যর্থ হয়েছেন অভিযোগ করে ব্রাসিলিয়ার গভর্নরকে রোববার থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেসজান্দ্রি দি মোরাইস।
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার এবং টিকটক কর্তৃপক্ষকে গণতন্ত্র বিরোধী প্রপাগান্ডা ছাড়ানো সব একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ইবানেইস হোচা, যিনি বোলসোনারোর ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত।
প্রেসিডেন্ট লুলার অভিযোগ, গভর্নরের অধীনে থাকা ব্রাসিলিয়ার সামরিক পুলিশ বাহিনী রোববারের তাণ্ডবের সময় বোলসোনারো সমর্থকদের আটকাতে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি।
লুলা বর্তমানে একটি সরকারি সফরে সাও পাওলো রাজ্যে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি বলেন, ‘‘যারা এসব করেছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।”
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলা বোলসোনারোই তার সমর্থকদের দাঙ্গার উসকানি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন লুলা।
নিজের প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে ব্রাজিল থেকে ফ্লোরিডায় চলে যান বোলসোনারো। তিনি উসকানির অভিযোগ অস্বীকার করে টুইটারে এক পোস্টে লেখেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সরকারি ভবনে যেভাবে অনুপ্রবেশ করে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তা ‘সব সীমা অতিক্রম করেছে’।
দাঙ্গাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত পরিকল্পনা সাজিয়ে রোববার জমায়েত হয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের জমায়েত হওয়ার কথা জানান পরও রাজধানীর পুলিশ কীভাবে এতটা অপ্রস্তুত ছিল এবং এত সহজে দাঙ্গাকারীরা তাদের বাধা অতিক্রম করে গেলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন লুলার মিত্ররা।