অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় থাকা ঋষি সুনাক আসলে কী চাইছেন, তা অনেকেরই প্রশ্ন।
Published : 23 May 2024, 02:06 AM
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক হঠাৎ আগাম জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে কৌতূহল; কেন এখনই ভোটের ডাক দিতে হল।
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় থাকা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সুনাক আসলে কী চাইছেন, কেনইবা নির্বাচনের জন্য এ সময় বেছে নিলেন তা বিশ্লেষণ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে রাজার অনুমতি পাওয়ার পর বুধবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দেওয়া নির্বাচনের ঘোষণায় সুনাক বলেন, ৪ জুলাই হবে ভোট।
চমক হিসেবে আসা এ ঘোষণার সংবাদ সংগ্রহের সময় কারো কারো হাতে ছাতা দেখা গেলেও সংবাদকর্মীদের অনেককে ভিজে ভিজে এটি কাভার করতে দেখা যায় । ক্যামেরায় ধরা পড়া সুনাককে বেশ হতাশই দেখাচ্ছিল।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০২২ সালে অক্টোবরে লিজ ট্রাসের বদলে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে আসা সুনাক বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন রাজা দ্বিতীয় চার্লস। ৪ জুলাই হবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন।
এর আগে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের ডাকা হয়। সেখানে আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক।
প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই ওয়েস্টমিন্সটারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে আলবেনিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শাফস প্রধানমন্ত্রীর ডাক পাওয়ায় তার পূর্বনির্ধারিত বিদেশ সফর পিছিয়ে দেন।
জাতীয় নির্বাচনের দৌড়ে বিরোধী দল লেবার পার্টি জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা লেবার পার্টি সরকার গঠন করবে।
আরেক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান লিখেছে, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থাকলেও লেবার নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন কিয়ার স্টারমার। তবে ভোটের আগের ছয় সপ্তাহে অনেক নেতাকে এই পদ দখলের প্রতিযোগিতায় হয়ত নামতে দেখা যাবে।
ভোটের দিনক্ষণ কেমন হল?
সেই দিনটি হবে বৃহস্পতিবার। যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার ভোট হওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। দিনটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মাসের প্রথম সপ্তাহে পড়েছে; আর এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন সুনাক, ভোট হবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে।
দ্য গার্ডিয়ানের হোয়াইটহল সম্পাদক রোয়েনা ম্যাসন বলছেন, দেশের কয়েকটি অঞ্চলের জন্য নির্বাচনের সময়টি যথার্থ হয়নি। বিশেষ করে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য, যেখানে ওই সময় স্কুল ছুটি হয়ে যাবে এবং অনেকে ছুটি কাটাতে যাবে।
এখনই কেন ঘোষণা
রোয়েনা ম্যাসন বলছেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রধানমন্ত্রী সুনাক বলে আসছেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার প্রমাণ রয়েছে তার কাছে। এখন তিনি যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তাতে জনগণের সায় আছে কিনা, তা যাচাই করে নিতে চাইছেন।
স্থানীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর বর্তমান সময়কেই ভোটের জন্য উপযুক্ত ভাবছেন সুনাক, কেননা সামনের পরিস্থিতি তার হাতে নাও থাকতে পারে।
বিশেষ করে ‘রুয়ান্ডা প্রকল্প’ তার অগ্রাধিকারে রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আসা অবৈধ অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে দিতে চান তিনি, যেখানে অবস্থান করে অভিবাসীরা তাদের আশ্রয় নেওয়ার আইনি লড়াই চালিয়ে যদি জিততে পারেন, তবে তারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ায় নিজের দায় এড়াতে প্রধানমন্ত্রী সুনাক এখন এ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। শরৎকালে কনজারভেটিভদের জন্য দেশের সব কিছু ভালো হয়ে যাবে না। ছোট ছোট নৌকা (অভিবাসী নিয়ে) আসতে থাকবে এবং একজন অভিবাসীকেও রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারবে না তারা। কর কমানোর সুযোগও তাদের হাতে খুব কমই আছে।
রাজার অনুমতি মিলেছে
নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজা দ্বিতীয় চারর্লসের অনুমতি চেয়ে তা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। রাজা যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর, আনুষ্ঠানিকতা হলেও সব কাজে তার অনুমোদন বা অনুমতি লাগে।
আগাম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিতে আগে রাজার অনুমতি নেওয়ার আইন করা হয় ২০১১ সালে। সেই থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তা এ আইন মেনেই হয়েছে।
পার্লামেন্টের কী হবে
যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে কয়েকদিন তা মুলতবি রাখা হয়। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৪ মে শুক্রবার পার্লামেন্ট মুলতবি হবে এবং ভেঙে দেওয়া হবে ৩০ মে বৃহস্পতিবার।
এমপিরা পদ হারাবেন, দায়িত্বে থাকবেন মন্ত্রীরা
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর পদ হারাবেন সংসদ সদস্যরা। যারা আবার নির্বাচন করতে চান, তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ফিরে গিয়ে প্রচারে নামবেন। তবে তারা এমপি হিসেবে নন, সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে থাকবেন।
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মন্ত্রীরা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। এ সময় সরকারি কর্মকাণ্ড সীমিত থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রচারে কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
প্রচারে যা দেখা যাবে
আগামী ছয় সপ্তাহ বা এমন সময়কালে দেশজুড়ে নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করবেন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক, লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার, লিব ডেম নেতা এড ডেভি, রিফর্ম পার্টির নেতা রিচার্ড টাইস এবং গ্রিন পার্টির নেতা কার্লা ডেনিয়ার ও অ্যাড্রিয়ান রামসেকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ভোট চাইতে দেখা যাবে। নিজেদের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে তারা নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাবেন। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি নির্বাচনি বাসে দেশজুড়ে ঘুরতে শুরু করবেন।
টিভি বিতর্ক হবে কি?
লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনি যুদ্ধকে সব সময়ই তাদের দুই দলের বলে দেখাতে চেষ্টা করে। ফলে সুনাক ও স্টারমারের মধ্যে টিভি বিতর্ক প্রত্যাশিত।
তবে গত নির্বাচনের সময় প্রধান দুই দলের নেতা তাদের ডেপুটিদের টিভি বিতর্কে পাঠিয়েছিলেন। অন্য দলগুলোর শীর্ষ নেতারা অবশ্য ছিলেন বিতর্কে।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যে হঠাৎ 'আগাম' নির্বাচনের ঘোষণা