জলবায়ু পরিবর্তন এই প্রজাতির মশা বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
Published : 12 Jun 2024, 08:49 PM
ফ্রান্স, স্পেন ও গ্রিসসহ ইউরোপের ১৩টি দেশে বংশ বিস্তার করছে আক্রমণাত্মক প্রজাতির ‘এশিয়ান টাইগার মসকুইটো’ বা ‘এডিস অ্যালবোপিক্টাস’ মশা। এই মশার কারণে ইউরোপে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই প্রজাতির মশা বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
বিবিসি জানায়, জুলাই মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে। তাই কর্তৃপক্ষ সেখানে এই মশা মারছে এবং মশার বিস্তারের ওপর নজর রাখছে।
ইসিডিসি সতর্ক করেছে বলেছে যে, খেলা উপলক্ষে সারা বিশ্ব থেকে প্রচুর মানুষ প্যারিসে যাওয়ার কারণে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
ফলে বাগান বা বারান্দায় জমে থাকা পানি ফেলে দিতে স্থানীয়দেরকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কারণ, জমে থাকা পানিতে এই মশারা বংশ বিস্তার করে। তাছাড়া, মশা প্রতিরোধক ব্যবহার করা এবং জানালা ও দরজায় স্ক্রিন ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উদ্বেগ:
গত দুই দশকে ইউরোপে মশা ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠেছে। এশিয়ান টাইগার মশাকে (এডিস অ্যালবোপিকটাস) বিশ্বে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মশা হিসেবে গণ্য করা হয়।
দক্ষিণ ইউরোপ থেকে এখন এটি গোটা মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইতালি, মাল্টা, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া এবং স্পেনে এ মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তাছাড়া বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভাকিয়াতে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের মতো রোগ ছড়ায় টাইগার মশা। এতদিন মশাবাহিত এই রোগগুলো সচরাচর আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে দেখা যেত।
সাইপ্রাসে বংশ বিস্তার করেছে এডিস এজিপ্টি নামের আরেক প্রজাতির মশা। এ মশা হলুদ জ্বর ছড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মশার মানুষকে কামড়ানো এবং রোগ ছড়ানোর সক্ষমতার কারণে ইউরোপের অন্যান্য স্থানে এর বিস্তার ঘটার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
ডেঙ্গুর উপসর্গ শুরু হয় জ্বর দিয়ে। তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সম্প্রতি কয়েক বছরে ইউরোপে ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তার দেখা গেছে। গত বছর ফ্রান্সে আটটি, ইতালিতে চারটি এবং স্পেনে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে দু’টি।
আক্রান্তদের বেশির ভাগই ভ্রমণ করতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন। দেশ থেকে দেশান্তরে মানুষের চলাচল এবং বাণিজ্যের কারণে ভ্রমণ ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটিয়েছে। এভাবে গত বছর ইউরোপে প্রায় ৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
তবে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছর ইউরোপে ১৩০ জন স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু সংক্রমিত হন। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৭১ জন।
মশাবাহিত ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন আরও বেশি দেখা যাচ্ছে। মার্চের শুরুতে দক্ষিণ স্পেনে একজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। জলবায়ু পরিবর্তন যে মশার বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে এ থেকেই তা স্পষ্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, ডেঙ্গু এখন বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে বিদ্যমান। গত বছর ডেঙ্গুতে ৬০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। আর প্রায় ৭ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।