ভারতে লোকসভা নির্বাচনের বুথ ফেরত জরিপে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের আভাস টানা দুদফায় ক্ষমতায় থাকা দলটির।
Published : 03 Jun 2024, 06:16 PM
ভারতে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফল আসতে এখনও প্রায় ২৪ ঘণ্টা বাকি থাকলেও সব বুথ ফেরত জরিপই ইঙ্গিত দিচ্ছে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর এ আভাসেই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজধানী দিল্লিসহ অন্যান্য স্থানে বিজয় উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
ওদিকে, ভোটের ফল প্রকাশের আগে দিয়ে লেখা এক খোলা চিঠিতে মোদী গোটা লোকসভা ভোটের প্রচারের অনুভূতি দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করেছেন। কন্যাকুমারীতে ধ্যান শেষে দিল্লি ফেরার পথে বিমানে বসে তিনি দেশবাসীকে এই চিঠি লেখেন।
এ বার্তায় মোদী তার সরকারের সাফল্যের কথা ফের একবার তুলে ধরেছেন এবং আগামী দিনের ভারতের জন্য নতুন কী সংকল্প নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাও জানিয়েছেন।
ভারতের সাত দফার লোকসভা নির্বাচন গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয়। শেষ হয় গত ১ জুন। ভোটের ফল প্রকাশ হবে ৪ জুন।
ভোট শেষের দিন সন্ধ্যাতেই বিভিন্ন সংস্থা বুথ ফেরত জরিপের ফল ঘোষণা করে ৷ একাধিক সংস্থা জানায় দিল্লির মসনদে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি ৷ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে এনডিএ জোট ৷ জয়ের হ্যাটট্রিক হতে পারে।
ভোট গণনায় এই পূর্বাভাস সত্য হলে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন নরেন্দ্র মোদী৷ তাই ভোটের ফলের এমন পূর্বাভাসে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)৷
তাই ভারতজুড়ে বিজয়োৎসবের প্রস্তুতিও এখন তুঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে হাজার হাজার লাড্ডু তৈরি হতে দেখা গেছে মুম্বাইয়ের এক মিষ্টির দোকানে। মোদী ক্ষমতায় এলেই মিষ্টিমুখ করানোর প্রস্তুতি চলছে সেখানে।
আর কেবল তাই নয়, মেগা ইভেন্টেরও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। এনডিটিভি জানায়, মোদীর শপথ অনুষ্ঠানের পর দিল্লির কয়েকটি স্থানে বিজেপি জয় উদযাপন করতে পারে। এর মধ্যে আছে রামলীলা ময়দান, লাল কেল্লা, ভারত মণ্ডপম, যশোভূমি, কর্তব্যপথ।
তাছাড়া, দিল্লিতে রোড শোও করতে পারে বিজেপি। আর সেই রোড শো করতে পারেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। লোককল্যাণ মার্গ থেকে বিজেপি সদর দফতর পর্যন্ত হতে পারে রোড শো।
নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গত সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি ভবনে শুরু হয়েছিল। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে রাষ্ট্রপতি ভবনে।
নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সেই তালিকায় তৈরি করে ফেলেছে মোদী শিবির। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখন শুধু খাতা-কলমে ফল ঘোষণার অপেক্ষা করছে বিজেপি তথা এনডিএ জোট।
বিজয় উদযাপনের এই প্রস্তুতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা লিখলেন। স্মরণ করিয়ে দিলেন ১০ বছরে দেশের মানুষের জন্য কী কী করেছে তার সরকার।
সপ্তম দফার ভোটের আগেই স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতি বিজড়িত কন্যাকুমারীতে ধ্যানে বসেছিলেন মোদী। এই সময়কালে তার মধ্যে হওয়া অনুভূতিগুলেই দেশবাসীর সঙ্গে তিনি ভাগ করে নিয়েছেন।
খোলা চিঠিতে মোদী লেখেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব, “২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, আজ আমাদের দেশে, গণতন্ত্রের উৎসব সমাপ্ত হচ্ছে। কন্যাকুমারীতে তিন দিনের আধ্যাত্মিক যাত্রার পর, আমি দিল্লির উদ্দেশ্যে বিমানে চড়েছি। দিনভর কাশীসহ আরও বেশ কয়েকটি আসনে মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিয়েছে।
“আমার মন অনেক অভিজ্ঞতা এবং আবেগ দিয়ে ভরা। আমি নিজের মধ্যে শক্তির সীমাহীন প্রবাহ অনুভব করি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অমৃত কালের প্রথম। আমি কয়েক মাস আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মিরাট থেকে প্রচার শুরু করেছিলাম। তারপর থেকে, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করেছি। এই নির্বাচনের চূড়ান্ত সমাবেশ আমাকে পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে নিয়ে গিয়েছিল, মহান গুরুদের দেশ এবং সন্ত রবিদাস জি-এর সাথে যুক্ত একটি ভূমি। সবশেষে আমি ভারত মায়ের পায়ের কাছে চলে আসি কন্যাকুমারীতে।”
চিঠিতে গরিব মানুষের ক্ষমতায়ন থেকে ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার কথাও তুলে ধরেছেন মোদী। তিনি লেখেন, ‘‘গরিবের ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিকতম মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অগ্রাধিকার ও আমাদের প্রচেষ্টা আজ গোটা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।’’
আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে মোদী 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' অভিযানের কথা উল্লেখ করেছেন। তার দাবি, গোটা বিশ্ব প্রযুক্তির এই গণতন্ত্রীকরণকে খতিয়ে দেখছে। প্রধানমন্ত্রীর জানান, কোনও দেশের সংস্কার স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া হতে পারে না। সে জন্য ভারতে 'রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম' কর্মসূচি নিয়ে চলছে তার সরকার। সংস্কারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে, আমলাতন্ত্র তা বাস্তবায়িত করে।
মোদীর মতে, উন্নত ভারত গড়াতে প্রয়োজন চার লক্ষ্য। গতি, মাপ, পরিসর ও মান বজায় রেখে দ্রুত গতিতে কাজ করা। উৎপাদনের পাশাপাশি উৎকর্ষেও জের দেওয়া। দেশে পুরনো চিন্তাভাবনা ও কুসংস্কারের পরিমার্জন প্রয়োজন। পাশপাশি সমাজকে নৈরাশ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ, নেতিবাচকতা থেকে মুক্তিই সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ।