যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে যেতে প্রেসিডেন্টের নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভেতর থেকেই চাপ জোরাল হচ্ছে। বিকল্প হিসাবে পছন্দনীয় হয়ে উঠছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
Published : 03 Jul 2024, 10:13 PM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর যে সংকটে পড়েছেন, তা এখন নির্বাচনী দৌড়ে থাকার বাইডেনের চেষ্টায় প্রকৃতই হুমকি হয়ে উঠছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে বাইডেনের ওপর নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ভেতর থেকেই চাপ জোরাল হচ্ছে। আর তার জায়গায় পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
বাইডেন নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে কমলা হ্যারিসই তার বিকল্প হিসাবে শীর্ষে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্টের প্রচার শিবির, হোয়াইট হাউজ এবং ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সাত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সিএনএন এর আটলান্টা স্টুডিওতে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে বার বার কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন, অসংগত কথা বলছিলেন বাইডেন। নির্বাচনের আগে তার খারাপ পারফরমেন্স দেখে দলের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে, তিনি হয়ত ট্রাম্পের সঙ্গে এর পরের বিতর্কে আবারও খারাপ করতে পারেন।
একারণে নির্বাচনের মাত্র মাস চারেক বাকি থাকার এই সময়েও ডেমোক্র্যাটিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই এখন বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
টেক্সাসের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য লয়েড ডগেট মঙ্গলবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে বাইডেনকে আহ্বান জানান। লয়েড ডগেট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রথম আইনপ্রণেতা, যিনি নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে আসতে বাইডেনকে প্রকাশ্যে আহ্বান জানালেন।
বাইডেন, তার হোয়াইট হাউজ এবং প্রচার শিবিরের সংকট সামলানোর যে কোনও চেষ্টাই বিফলে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাইডেন বিতর্কে তার খারাপ করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দাতাদেরকে যা বলেছেন, তাতে তার সরকারি কাজ চালানোর সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ কেবল আরও বেড়েছে।
এদিন বাইডেন বলেছেন, বিতর্কের সময় মঞ্চে তিনি প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলেন। এর জন্য বিতর্কের আগে আকাশপথে ইউরোপে দু’টি সফরের পর ক্লান্তি ভাব (জেট ল্যাগ) একটি কারণ ছিল বলে বাইডেন জানিয়েছেন।
এতে ৮১ বছর বয়সে বাইডেন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর চেষ্টা নিলেও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মতো প্রাণশক্তি তার থাকবে কিনা এবং মেয়াদ শেষ হতে হতে তার বয়স যে আরও বেড়ে যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
দলের শীর্ষ নেতারা এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্বাস্থ্য এবং মানসিক অবস্থা নিয়ে আরও খোলাখুলিভাবে বিস্তারিত তথ্য জানানোর দাবি তুলেছেন। বিতর্কের প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভেসের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিও বলেছেন, এই বিতর্ক বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন সামনে এনেছে।
আর এ পরিস্থিতিতেই উঠে আসছে ৫৯ বছর বয়সী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নাম। বাইডেনের সবচেয়ে দৃঢ় সমর্থক দক্ষিণ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান জেমস ক্লেবার্ন মঙ্গলবার এমএসএনবিসি-কে বলেছেন, তিনি এখনও প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেই নির্বাচনি দৌড়ে দেখতে চান। কিন্তু বাইডেন সরে দাঁড়ালে তিনি এ দৌড়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিসকে সমর্থন দেবেন।
কয়েকজন প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা অবশ্য বাইডেনের বিকল্প হিসেবে কমলা হ্যারিসকে বাদ দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসম, মিশিগানের গ্রেচেন হুইটমার ও পেনসিলভেইনিয়ার জোশ শ্যাপিরোর নামও করেছেন। কিন্তু হ্যারিসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব, বলেছেন বাইডেনের প্রচার শিবির এবং হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হলে হ্যারিস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচার শিবিরের সংগৃহীত তহবিল ও প্রচারের অবকাঠামো পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া, যেসব বিকল্প প্রার্থীর নাম উঠে আসছে তাদের মধ্যে হ্যারিসের নামই সর্বাধিক পরিচিত। আর ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জরিপে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে এমন প্রার্থী হিসাবে শীর্ষে রয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপের ফল অনুসারে, ট্রাম্পের থেকে মাত্র এক শতাংশ পয়েন্ট (৪২%-৪৩%) পিছিয়ে রয়েছেন হ্যারিস। জরিপ অনুযায়ী এই ব্যবধান ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট। এই পরিসংখ্যানের বিচারে হ্যারিস প্রায় বাইডেনের মতোই শক্তিশালী।
তাছাড়া, হ্যারিস ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাস করে গেছেন এবং রিপাবলিকানদের নিবিড় নিরীক্ষণেও উতরে গেছেন।
২০০৮ ও ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারে কাজ করা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক প্রচার উপদেষ্টা মাইকেল ত্রুহিলো বলেছেন, “ভাইস প্রেসিডেন্টকে ছাড়িয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রায় অসম্ভব।”
সূত্র: রয়টার্স/ সিএনএন