উইসকনসিনে রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলন থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফেরার ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর ট্রাম্পও পৌঁছেছেন সেখানে।
Published : 15 Jul 2024, 11:36 PM
নির্বাচনি সভায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় তার সমর্থকরা আগের তুলনায় বেশি উজ্জীবিত, ঢাকায় এক আলোচনায় এমনটিই তুলে ধরলেন রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের একজন প্রতিনিধি।
সোমবার ঢাকার ইএমকে সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক আয়োজনে সম্মেলন স্থল থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একথা বলেন রিপাবলিকান দলের ডেলিগেট প্যাটি রেইম্যান।
‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর গুলির ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর শুরু হতে যাওয়া সম্মেলনের ঠিক আগে তিনি বলেছেন, “শুক্রবার রাতে উইসকনসিনে আমরা নির্বাচনি প্রচারণার অফিস খুলেছি। শনিবারই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উইসকিনসনের সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রচার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করার জন্য।
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়েক ঘণ্টা পরেই ভয়ানক পরিস্থিতি হয়েছে, তবে তিনি ঠিক আছেন। যেসব ডেলিগেটের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারা তাকে সহায়তা করার জন্য এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় আরও বেশি উজ্জীবিত।”
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনি প্রচারের সময় জনসভায় ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এক হামলাকারী। ট্রাম্পের ডান কান ছুয়ে বেরিয়ে যায় গুলি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গুলিতে আহত অবস্থায় উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়ছেন, তার কান থেকে রক্ত গালের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে আর সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে ধরে আছেন- অকল্পনীয় এই ছবিগুলো নভেম্বরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।
গুলির ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তীব্র ভাষায় নিন্দা করলেও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু রাজনৈতিক সহযোগী ও সমর্থক এ সহিংসতার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্টকে দোষারোপ করা শুরু করে দিয়েছেন।
একজন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ‘একটি হত্যাকাণ্ডের প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগও তুলছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে।
ওই হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফেরার ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর ট্রাম্প উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে পৌঁছেছেন রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে। সোমবার শুরু এ সম্মেলনে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। বৃহস্পতিবার দেওয়া হবে অনুমোদন।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন দলটির জাতীয় সম্মেলন ঘিরে এ ধরনের সম্মেলন কীভাবে কাজ করে, ডেলিগেটদের কীভাবে বাছাই করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নানাদিক তুলে ধরা হয় ঢাকার এ আলোচনা অনুষ্ঠানে।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তা লিওনার্ড হিলের সঞ্চালনায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন এবং নাগরিক সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্যাটি রেইম্যানের সঙ্গে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ।
পঞ্চমবারের মত রিপাবলিকান দলের জাতীয় সম্মেলনে ডেলিগেট হিসেবে যোগ দিচ্ছেন প্যাটি রেইম্যান; তিনি এক সময় সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম সেনসেনব্রেনারের ’কন্সটিটুয়েন্ট সার্ভিস’ পরিচালক ছিলেন।
জাতীয় সম্মেলনের জন্য তৃণমূল থেকে ডেলিগেট বাছাই করার প্রক্রিয়া তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সম্মেলনের তৃণমূলের পৌঁছার সুযোগ এর মাধ্যমে তৈরি হয়। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে নানা বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ তৈরি করা হয়।
নিজের পোস্টাল ব্যালট অনুষ্ঠানে দেখিয়ে লিওনার্ড হিল বলেন, ব্যালটে শুধু প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থাকেন তা নয়। যে এলাকার ভোটার, সে এলাকা অনুযায়ী প্রার্থী সংখ্যা নির্ধারিত হয়। যার মধ্যে বেশির ভাগ পদ থাকে দলের দলীয়, আবার কিছু পদ থাকে নির্দলীয়।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, অঙ্গরাজ্যগুলোর ব্যালটে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের সমর্থন লাগে। সে কারণে প্রত্যেক রাজ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সংখ্যা সমান থাকে না, একেক রাজ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সংখ্যা একেক রকম হয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কেবল প্রধান দুদলের প্রাধান্যের মধ্যে জনগণের সব অংশের মতের প্রতিফলন ঘটে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্যান্য দল সেভাবে সমর্থন পায় না কেন, এটা ট্রিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। অনেকে তৃতীয় দলকে এগিয়ে নিয়ে আসার ইচ্ছা দেখালেও তা হয়ে ওঠেনি।
দুদলের প্রাধান্য থাকলেও জনগণের ‘বেশির ভাগ’ অংশের মতের প্রতিফলন তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে হয়ে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র শক্তিশালী হলেও বাংলাদেশে তা না দেখার কথা তুলে ধরেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তাদের মধ্যে নাই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলই জানে না, তাদের কতজন সদস্য আছে। ফলে তাদের সমর্থনের যে সংখ্যাটা দেওয়া হয়, সেটা ‘অস্পষ্ট পরিসংখ্যান’।