সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়ে তাকে আলিঙ্গন তার সঙ্গে করমর্দন করেন।
Published : 20 May 2023, 12:54 PM
সৌদি আরবের জেদ্দায় আরব লীগের সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে।
শুক্রবারের এ বৈঠকের শুরুতে সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আসাদকে স্বাগত জানিয়ে তাকে আলিঙ্গন ও করমর্দন করেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরব লীগের নেতারা বছরের পর বছর আসাদকে এড়িয়ে চলেছেন। কিন্তু সম্প্রতি নীতি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে শত্রুতার পাল্টা উল্টিয়ে আসাদকে ফের নিজেদের মাঝে ফিরিয়ে এনেছেন তারা, যিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে শিয়া ইরান ও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সমর্থনে তার শত্রুদের পরাজিত করেছেন; কিন্তু আরব দেশগুলোর এই নীতি পরিবর্তনের বিরোধীতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলো।
এই সম্মেলন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কির উপস্থিতি ও যুবরাজ মোহাম্মদের ইউক্রেইন যুদ্ধে মধ্যস্থতা করতে রিয়াদের প্রস্তুতির উল্লেখ বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরেছে।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত তেল সম্পদে সমৃদ্ধ সৌদি আরব গত বছর আরব বিশ্বের কূটনৈতিক নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। সুন্নি প্রধান দেশটি আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া প্রধান ইরানের সঙ্গে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে, সিরিয়াকে আরব লীগে ফিরিয়ে এনেছে এবং সুদানের সংঘাতে মধ্যস্থতা করছে।
এখন আসাদ ইরানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করছে অনেক আরব দেশ। সম্মেলনে আসাদ বলেছেন, “আরববাদ সিরিয়ার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।”
কিন্তু জেদ্দায় তিনি কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র তেহরানের বিষয়ে কিছু বলেননি, তবে পরোক্ষভাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তায়িপ এরদোয়ানের সমালোচনা করেছেন। এরদোয়ান সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন যোগাচ্ছেন এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের বাহিনী পাঠিয়েছেন।
আসাদ ‘সম্প্রসারণবাদী অটোমান মনোভাবের বিপদ’ এর কথা উল্লেখ করে এটি সুন্নি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী মুসলিম ব্রাদারহুড দ্বারা প্রভাবিত বলে সতর্ক করেন। সিরিয়া ও অন্য আরব রাষ্ট্রগুলো মুসলিম ব্রাদারহুডকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে।
সম্মেলনে যুবরাজ মোহাম্মদ বলেন, তিনি আশা করছেন ‘আরব লীগে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সিরিয়ায় সংকটগুলো শেষ হবে’।
২০১১ সালের প্রথমদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নির্মম দমনপীড়ন ও পরবর্তীতে সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে আসাদ ও তার সরকারকে আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সিরিয়ার যুদ্ধে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
মোহাম্মদ বলেন, “আমাদের অঞ্চলকে সংঘাতের ক্ষেত্রে পরিণত হতে দেওয়া অনুমোদন করবে না সৌদি আরব। বিবাদের বেদনাদায়ক বছরগুলোর পৃষ্ঠা উল্টানো হয়ে গেছে।”
আসাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, অবশ্যই আগে সিরিয়ার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রগতি হওয়া দরকার।
এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের দৃষ্টিভঙ্গী বুঝতে পারছি আমরা, কিন্তু চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে নতুন পথ দরকার আর তা সংলাপ ছাড়া সম্ভব নয়।
“তাদের উদ্বেগের উৎসগুলো নিয়ে আমাদের ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলবো আমরা।”
পারস্য উপসাগরীয় সরকারি চক্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, “আমেরিকানরা হতাশ। এই অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণ আমরা, আমরা হাতে থাকা উপায় দিয়ে আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি।”
উপসাগরীয় এক বিশ্লেষক রয়টার্সকে বলেছেন, “সিরিয়া ইরানের অধীনস্ত এক দেশে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। আমরা কি চাই, সিরিয়া কম আরব ও আরও ইরানি হোক নাকি আরব কাঠামোয় ফিরে আসুক?”
আসাদের ফিরে আসাকে অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি আরব রাষ্ট্রগুলো এটিও চায় যে তিনি সিরিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকা মাদক ব্যবসা বন্ধে পদক্ষেপ নিন। এসব মাদক সিরিয়ার ভেতরেই উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেখান থেকে চোরাপথে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
আরও খবর: