ভারতের গুরবিন্দর সিং এবং হরবীর কৌর দম্পতির ছেলে ক্যান্সারে মারা যাওয়ার আগে তার বীর্য সংরক্ষণ করা হলেও আইনি জটিলতার কারণে তা পাচ্ছিলেন না তারা।
Published : 09 Oct 2024, 10:58 PM
ক্যানসারে মারা যাওয়া ছেলের সংরক্ষিত হিমায়িত বীর্য বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তরের এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লির হাই কোর্ট।
গুরবিন্দর সিং এবং হরবীর কৌর দম্পতির ৩০ বছর বয়সী ছেলে প্রীত ইন্দর সিংয়ের মৃত্যুর আগে তার বীর্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে ছেলের স্মৃতি হিসেবে তা পাচ্ছিলেন না ৬০ এর কোঠার এই বৃদ্ধ দম্পতি।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর গত শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টের দেওয়া আদেশে তারা সেই অধিকার পেলেন। আদালতের বিচারপতি প্রতিভা এম সিং রায়ে বলেছেন, মৃত্যুর পর ছেলের বীর্য দিয়ে সন্তান উৎপাদনে কোনও আইনি বাধা নেই।
বিচারপতি আরও বলেন, বীর্য দাতার সম্মতি থাকলে এবং তার কোনও স্বামী-স্ত্রী না থাকলেও আইনি বাধা নেই। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনানুযায়ী, মৃত ছেলের প্রথম শ্রেণির আইনি উত্তরাধিকার হওয়ার কারণে বাবা-মা তার হিমায়িত বীর্য পেতেই পারেন।
প্রীত ইন্দর সিংয়ের ব্লাড ক্যান্সর ধরা পড়ে ২০২০ সালের জুনে। তিনি বিবাহিত ছিলেন না। তবে ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি শুরু করার আগে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতাল থেকে তাকে বীর্য সংরক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
পরে প্রীতের সম্মতিতে তার বীর্য সংরক্ষণ করা হয়। কারণ, কেমোথেরাপিতে প্রীতের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা চলে যেতে পারে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল।
২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বরে মারা যান প্রীত ইন্দর সিং। এর কয়েকমাস পর প্রীতের বাবা গুরবিন্দর সিং এবং মা হরবীর কৌর হাসপাতালের কাছে আবেদন জানান, তাদেরকে যেন সংরক্ষিত ওই বীর্যের নমুনা দিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু হাসপাতাল তাদের হাতে সন্তানের বীর্য তুলে না দেওয়ায় তারা দিল্লি হাই কোর্টের শরণাপন্ন হন। তারা আদালতকে বলেন, এই বীর্য দিয়ে বিকল্প মাতৃত্বের (সারোগেসি) মাধ্যমে বংশরক্ষায় কোনো সন্তানের জন্ম হলে তার দায়িত্ব নেবেন তারা। তারাসহ তাদের দুই মেয়ে এই হিমায়িত বীর্যের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ভারতে এ সম্পর্কিত যে আইন আছে, তাতে অবিবাহিত ব্যক্তির বীর্যর নমুনা নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা নেই। একমাত্র বিবাহিত ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্ত্রীর অধিকারের কথাই আইনে বলা আছে।
এ বিষয়টি নিয়ে শুনানি করতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত গুরুবিন্দর-কৌর দম্পতির পক্ষে রায় দিল আদালত। রায়ে বলা হয়, শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর নমুনা সম্পদের মধ্যেই পড়ে। তাই সেটি তার মা-বাবার হাতে তুলে দিতে হবে হাসপাতালকে।
আদালত আরও বলেছে, মৃত্যুর আগে প্রীত তার বীর্য সংরক্ষণে রাজি হয়েছিলেন। অর্থাৎ, প্রজননের জন্যই তিনি এতে সম্মত হয়েছিলেন। তিনি হয়ত বাঁচতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রকৃতি তা হতে দেয়নি। তার মৃত্যুর পর মা-বাবাই এখন উত্তরাধিকার হওয়ায় বীর্য পাওয়ার অধিকার তাদের আছে।
চার বছরের আইনি লড়াইয়ের পর দিল্লি হাই কোর্টের এই রায় এসেছে। এতে খুবই খুশি গুরুবিন্দর-কৌর দম্পতি। এখন তারা সারোগেসির মাধ্যমে নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পারবেন। ভুলতে পারবেন পুত্রশোক।
বিবিসি-কে প্রীতের মা হরবীর কৌর বলেন, “আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য যে আমরা ছেলেকে হারিয়েছি। কিন্তু আদালত আমাদেরকে খুবই মূল্যবান উপহার দিয়েছে। আমরা এখন আমাদের ছেলেকে ফিরে পেতে সক্ষম হব।”