এই পদক্ষেপ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশকে সাবেক একনায়ক সুহার্তোর কঠোর দমনপীড়নের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন।
Published : 20 Mar 2025, 05:12 PM
বেসামরিকদের জন্য থাকা সরকারি নানান পদে সামরিক কর্মকর্তাদের যাওয়ার সুযোগ করে দিতে আইনের বিতর্কিত সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট।
বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হতে পারে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা অনেক গোষ্ঠী নতুন এ সংশোধনীর সমালোচনা করে বলেছে, এই পদক্ষেপ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশকে সাবেক একনায়ক সুহার্তোর ‘নতুন ব্যবস্থা’ নামের কঠোর দমনপীড়নের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যখন সামরিক কর্মকর্তারা বেসামরিকদের নানান বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতো।
স্পিকার পুয়ান মহারানি পার্লামেন্টের প্লেনারি অধিবেশনে সর্বসম্মত ভোটে সংশোধনীটি অনুমোদনে নেতৃত্ব দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সেটিকে পাস ঘোষণা করেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এ সংশোধনী করা হয়েছে বলে স্পিকার পরে দাবিও করেন।
গত বছরের অক্টোবরে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বেসামরিক নানা খাত ও কর্মসূচিতে সশস্ত্র বাহিনীর কর্তৃত্ব বাড়াচ্ছেন, এসবের মধ্যে তাকে খ্যাতি এনে দেওয়া ‘শিশুদের জন্য বিনামূল্যে খাবার’ কর্মসূচিও আছে।
সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম বিস্তৃত হলে সেনা কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কৃত অপরাধের জবাবদিহিতা থেকে দায়মুক্তির সুযোগ নেবে বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
সুবিয়ান্তোর সরকার বলছে, তারা সামরিক বাহিনীগুলোর আওতা বাড়াচ্ছে না, সামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাইছে। তবে কোনো সেনা কর্মকর্তা চাইলেই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মতো সংস্থায় বেসামরিক লোকদের জন্য থাকা কোনো সরকারি পদে যোগ দিতে পারবে না, তার আগে তাকে তার বাহিনী থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
সেনা কর্মকর্তারা রাষ্ট্র-মালিকানাধীন কোনো কোম্পানিতেও যোগ দিতে পারবেন না, আইন সংশোধনের ফলে সামরিক বাহিনী ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে পারে এমন উদ্বেগ উড়িয়ে দিয়ে এমনটাই বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার এক আইনপ্রণেতা।
বিতর্কিত সংশোধনী পাস হওয়ায় জাকার্তায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে একাধিক গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠী। কিছু শিক্ষার্থী বুধবার সন্ধ্যা থেকেই পার্লামেন্ট ভবনের পেছনের ফটকে অবস্থান নেয়; তারা সামরিক আইনের বিতর্কিত সংশোধনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় এবং বেসামরিক সব পদ থেকে সামরিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা ওই বিক্ষোভকারীদের পার্লামেন্ট ভবন থেকে সরে যেতে বললেও শিক্ষার্থীরা রাজি হয়নি, রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্ষোভকারী।
পার্লামেন্টে আইনের সংশোধনী যখন পাস হয় তখন মাত্র কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী উপস্থিত ছিল।
পরে পার্লামেন্ট ভবনের নিরাপত্তায় পুলিশকে সহায়তা করতে সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
“ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বৈশ্বিক সামরিক প্রযুক্তির কারণে প্রচলিত ও অপ্রচলিত সব সংঘাত মোকাবেলার লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর রূপান্তর প্রয়োজন,” সংশোধিত আইনের সমর্থনে বলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাফরি সামসুদ্দিন।
“সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে ইন্দোনেশীয়দের কখনোই হতাশ করবো না আমরা,” বলেন তিনি।
তবে ভূ-রাজনৈতিক কোন ধরনের পরিবর্তন এবং তার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক আইন সংশোধনের যোগসাজশ কী, তিনি তা খোলাসা করেননি।