ওই শিক্ষার্থী গত ২ জানুয়ারি তার স্কুলের ছাত্রাবাসে এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
Published : 10 Jan 2025, 02:24 PM
চীনের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
ভিডিওতে দেখা গেছে, শানসি প্রদেশের পুচেং শহরে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন জিনিস ছুড়ে মারছে। এসময় কর্মকর্তাদের কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করতেও দেখা যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই শিক্ষার্থী গত ২ জানুয়ারি তার স্কুলের ছাত্রাবাসে এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে তার মৃত্যুর পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ ওঠে।
এর পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে চলে এই বিক্ষোভ। তবে এই সপ্তাহের শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ বিবিসি এরপর থেকে পুচেংয়ে আর কোনো বিক্ষোভের প্রমাণ পায়নি।
চীনের জন্য প্রকাশ্যে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। তবে ২০২২ সালে কোভিড নীতির বিরুদ্ধে হওয়া "হোয়াইট পেপার" বিক্ষোভের পর থেকে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিক্ষোভের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
কারণ চীনে শি জিনপিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে বা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন বিক্ষোভ বিরল। কারণ সেখানে সরকারের সরাসরি কোনো সমালোচনার ফল হতে পারে কঠোর শাস্তি।
ওই বিক্ষোভে মূলত বাকস্বাধীনতা না থাকার প্রতীক হিসেবে সাদা কাগজ দেখান বিক্ষোভকারীরা।
তবে পুচেংয়ের বিক্ষোভ নিয়ে নীরব রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। কর্তৃপক্ষের কাছে সংবেদনশীল মনে হওয়া অন্য যেকোনো ঘটনার মতোই এবারের বিক্ষোভেরও কোনো ভিডিও ক্লিপ বা এ নিয়ে দেওয়া পোস্ট চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকাংশে সেন্সর করা হয়েছে।
কিন্তু চীন থেকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ভিডিও এক্স-এ পোস্ট করা হয়েছে।
এই ভিডিওগুলো পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারে ধারণ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। তবে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগের কোনো ভিডিও অনলাইনে পাওয়া যায়নি।
বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে পুচেং সরকারের প্রচার বিভাগের এক প্রতিনিধি বিক্ষোভ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ড্যাং নামের ওই কিশোর পুচেংয়ের শিক্ষা কেন্দ্রের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল।
বিবিসি লিখেছে, মৃত্যুর আগে রাতের বেলা শিক্ষার্থীদের আড্ডার শব্দে ড্যাংয়ের ঘুম ভেঙে যায়। এ নিয়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে স্কুলের এক কর্মকর্তা সেটি মীমাংসা করে দেন।
সেই রাতেই ছাত্রাবাসের নিচে এক শিক্ষার্থী ড্যাংয়ের মৃতদেহ দেখতে পায়।
বিবৃতিতে একে ‘স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ায় ঘটা দুর্ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পুলিশ তদন্ত সম্পন্ন করে বর্তমানে ঘটনাটিকে ফৌজদারি মামলার বাইরে রেখেছে।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা অনেকেই দাবি করছেন, ড্যাংয়ের মৃত্যুর পেছনে আরও ঘটনা আছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ সত্য গোপন করছে।
এদিকে, তথ্য-প্রমাণহীন একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ড্যাং আত্মহত্যা করেছে। কারণ তার সাথে ঝগড়া করা ছেলেটি তাকে হয়রানি করেছিল।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ড্যাংয়ের শরীরে পাওয়া আঘাতের চিহ্নের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বর্ণিত ঘটনার মিল নেই আর তাদেরকে অনেকক্ষণ তার মৃতদেহ পরীক্ষা করতে দেয়া হয়নি।
এই অভিযোগ পুচেংয়ের অনেককে ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেছে। ফলে অন্তত কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভে নেমে আসে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জন্য বুলিং অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর আগেও ছাত্রদের মৃত্যুর কিছু ঘটনা বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে চীনের একটি আদালত সহপাঠীকে হত্যার দায়ে দুই কিশোরকে কারাদণ্ড দিয়েছে।