গ্রহাণুতে নাসার ডার্টের আঘাতের পর ১০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ধ্বংসস্তূপ

নাসার এ মহাকাশযানের আঘাতের পর গ্রহাণুটির গতিপথ বদলেছে কিনা, বিজ্ঞানীরা এখন তা-ই খতিয়ে দেখছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 10:58 AM
Updated : 5 Oct 2022, 10:58 AM

নাসার ডার্ট মহাকাশযান শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরে একটি গ্রহাণু পিণ্ডে সফলভাবে আঘাত হানার পর ওই গ্রহাণুটি এরই মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ধ্বংসস্তূপ মহাকাশে ছড়িয়ে দিয়েছে।

চিলির একটি টেলিস্কোপ দৈত্যাকার ওই গ্রহাণুর পেছনদিকে ধূমকেতু সদৃশ উদগীরণের চমকপ্রদ একটি ছবি ধারণ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা কোনো গ্রহাণু হুমকি তৈরি করলে ধাক্কা মেরে এর গতিপথ বদলে দেওয়া যায় কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতে গত সপ্তাহে নাসার মহাকাশযান ওই গ্রহাণুর ওপর আছড়ে পড়েছিল।

মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া ওই গ্রহাণুর নাম দেওয়া হয়েছে ডাইমরফোস। দশ মাস আগে পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়া নাসার ‘ডার্ট মহাকাশযান’ গত ২৬ সেপ্টেম্বর সফলভাবে ওই গ্রহাণুর গায়ে আঘাত হানে ও ধ্বংস হয়ে যায়।

এর ফলে গ্রহাণুটির গতিপথ বদলেছে কিনা, বিজ্ঞানীরা এখন তা-ই খতিয়ে দেখছেন।

তারই অংশ হিসেবে চিলির জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সাউদার্ন অ্যাস্ট্রোফিজিকাল রিসার্চ টেলিস্কোপ ব্যবহার করে ডার্ট আছড়ে পড়ার দুইদিন পর ব্যাপক দীর্ঘ ধ্বংসস্তূপের ওই অনন্যসাধারণ ছবিটি ধারণ করেন।

এই ধ্বংসস্তূপ এখনই লম্বা ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি; নির্গত হওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য আরও বড় হবে বলেই মনে হচ্ছে।

মহাকাশের অন্যান্য জঞ্জালও এর আশপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে বলে ছবিতে মনে হচ্ছে।

ধ্বংসস্তূপের যাত্রাপথ আসছে সপ্তাহ ও মাসগুলোতে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির মাইকেল নাইট।

সাড়ে ৩২ কোটি ডলারের এই মিশনে ২০২১ সালের নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স ঘাঁটি থেকে ডার্ট মহাকাশযানটি নিয়ে মহাকাশের দিকে রওনা হয় স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-নাইন রকেট। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ডার্ট, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ কাটিয়ে সূর্যের চারদিকে নিজ কক্ষপথে ঘুরতে শুরু করে।

সেই যাত্রাপথেই ২৬ সেপ্টেম্বর সংঘর্ষ হয় ডাইমরফোসের সঙ্গে। আর পুরো পরীক্ষাটি ছিল একটি রোবোটিক সুইসাইড মিশনের মত।

গ্রহাণুর সঙ্গে ডার্টের দূরত্ব যত কমছিল, এর গায়ে বসানো ক্যামেরা ড্রাকোর পাঠানো ছবিতে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছিল ডাইমরফোসের আকার। তাতে উত্তেজনা বাড়ছিল নাসার মিশন অপারেশন সেন্টারে।

চূড়ান্ত মুহূর্তে পুরো টিভি স্ক্রিন দখল করে নেয় ডাইমরফোসের পৃষ্ঠদেশের ছবি এবং তারপর ছবি পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, সফলভাবে গ্রহাণুকে ধাক্কা দিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের পাঠানো ডার্ট।

Also Read: পৃথিবীকে রক্ষার পরীক্ষা: সফলভাবে গ্রহাণুতে আঘাত হেনেছে নাসার ‘ডার্ট’

ডার্ট হচ্ছে ডবল অ্যাস্টোরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট।

আকারে ভেন্ডিং মিশনের চেয়েও ছোটো ওই মহাকাশযানের ধাক্কায় গ্রহাণু ডাইমরফোসের গতিপথ আদৌ পাল্টানো গেল কি না, কিংবা কতটা পাল্টালো বিজ্ঞানীরা এখন সেটা দেখবেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মাইল বেগে ডার্টের ওই আঘাতে ডাইমরফোসেরগতি খুব সামান্য হলেও কমবে, সেটা হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ পরিমাণ। তাতেও এর কক্ষপথে সুক্ষ্ম পরিবর্তন আসবে, যা দীর্ঘমেয়াদে এর গতিপথ পাল্টে দেবে।

পৃথিবীর জন্য বিপদজনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়ার এই কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।