ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভে গত মাসে যখন বৃষ্টির মতো বোমা পড়ছিল, সেসময় নিজের বাসায় তালা মেরে ভারতে পালিয়ে আসেন আনা হোরোদেৎস্কা, সঙ্গে নিয়ে আসেন কয়েকটি টিশার্ট আর একটি কফি মেশিন।
Published : 12 Apr 2022, 04:24 PM
৩০ বছর বয়সী এ তরুণী গত ১৭ মার্চ দিল্লি বিমানবন্দরে নামলে তাকে স্বাগত জানান ৩৩ বছর বয়সী আইনজীবী অনুভব ভাসিন। ঢাকিদের মনোমুগ্ধকর সুরের মাঝে এ ভারতীয় যুবক হাঁটু গেড়ে দেন বিয়ের প্রস্তাব; সানন্দেই রাজি হন আনা, তৎক্ষণাৎ আঙুলে আংটিও জুড়ে যায়।
রোববার ভারতের রাজধানীতে জমকালো এক আয়োজনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও সেরে ফেলেছেন এই যুগল; আইনি বৈধতা পেতে চলতি মাসের শেষের দিকে আদালতে বিয়ে নিবন্ধনের পরিকল্পনাও তারা চূড়ান্ত করেছেন, জানিয়েছে বিবিসি।
বোমার হাত থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে আসা আনার সঙ্গে অনুভবের পরিচয় হয় তিন বছর আগে। শেষ এক বছর ধরে তারা চুটিয়ে প্রেমও করেছেন।
আনা একটি আইটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে তিনি যখন ভারতে আসেন তখন একটি বারে অনুভবের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল।
এরপর দুজন ফোন নম্বর বিনিময় করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একে অপরকে অনুসরণ শুরু করেন।
অনুভব বলেন, “সেই সময়টাতে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। অল্প সময়ের ভালো লাগার চেয়ে সেটি ছিল বেশি কিছু। ও কিইভে ফেরার পরও প্রতিদিন ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছি আমরা।”
এর পর ফের দুজনের দেখা হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দুবাইয়ে। ওই সাক্ষাৎই তাদের সম্পর্র্ককে আরও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনুভব বলেন, “আমরা বুঝতে পারলাম সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আমাদের একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।”
ওই বছরের অগাস্টে অনুভব কিইভে যান, ডিসেম্বরে আনাও ভারতে আসেন।
“সফরের শেষ দিন অনুভবের মা মার্চে আমাদের বিয়ে করতে পরামর্শ দেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিলাম, কিন্তু এত দ্রুত করবো তা কল্পনা করিনি,” বলেন এ ইউক্রেইনীয়।
এসব চিন্তা করেই এ যুগল সিদ্ধান্ত নেন- আনা মার্চের শেষ দিকে ভারতে এলে বিয়ের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কয়েকমাস পর থেকে আনা ভারতে পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করবেন এমন প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
এরমধ্যেই যুদ্ধ বেধে যায়।
রুশ হামলা শুরুর আগের দিনও অনুভব আনাকে ভারতে চলে আসার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু আরও অনেকের মতো আনারও মনে হয়েছিল, উত্তেজনা যতই থাক, এমনকী যদি যুদ্ধও বাধে, তবুও কিইভ সুরক্ষিত থাকবে।
কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি তার ঘুম ভাঙে রুশ বাহিনীর ছোড়া গোলার শব্দে। পরদিনই পোষা কুকুর ও মাকে নিয়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন ইউক্রেইনীয় ওই তরুণী।
২৬ ফেব্রুয়ারি আনা ইউক্রেইন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুভব সেসময় তাকে নিরুৎসাহিত করেন।
কিন্তু আনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। পরদিন সকালে একটি ট্যাক্সি জোগাড় করে রেলস্টেশনে পৌঁছান।
তবে পথটা সহজ ছিল না। প্রথমে স্লোভাকিয়া, তারপর পোল্যান্ডে যেতে হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয় আনাকে, এ সময় অনুভব ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ভিসা করছিলেন।
শেষ পর্যন্ত আনা ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি চলে যান, সেখান থেকে দিল্লির ফ্লাইটে ভারতে নামেন। তার এক বছরের ভিসায় ভারত সফরের উদ্দেশ্য হিসেবে লেখা রয়েছে ‘অনুভব ভাসিনকে বিয়ে করা’।