মিয়ানমারে সেনাশাসনের এক বছর হতে চলেছে। এই এক বছরে দেশটির সাধারণ মানুষের উপর নজরদারি এতটাই বেড়েছে যে তাদের স্বাভাবিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
Published : 31 Jan 2022, 07:11 PM
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। যার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন টানা বিক্ষোভ চলে। দেশটির তরুণরা এখনও সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে মিয়ানমারের তরুণরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং বিক্ষোভের আয়োজন করে। সেনাশাসকরা বিক্ষোভ বন্ধে এবার ইন্টারনেটের উপর কঠোর নজরদারি শুরু করেছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগনে একটি সেনাপোস্টে একদল তরুণকে আটক করে তাদের মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয়। মোবাইলে থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নানা অ্যাপ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ভিপিএন ব্যবহার করার কারণে এক তরুণকে জরিমানাও করা হয়।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহারকারীরা নিজেদের অবস্থান গোপন করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে। যা বন্ধে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী এবার ভিপিএন-র ব্যবহার বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
যার ব্যাখ্যায় জান্তা বাহিনী বলছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা ও শাসন ব্যবস্থার উন্নতি এবং অপরাধ দমনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ওদিকে, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নাগরিকরা নিজেদের ফোন থেকে ‘লোকেশন’ দেখানোর ‘অপশন’ বন্ধ করে রাখছে। শুধু সদস্যরা দেখতে পারবেন এমন গোপন ম্যাসেজিং অ্যাপ, ভিপিএন এবং বিদেশি সিম ব্যবহার করে নাগরিকরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে, বিক্ষোভের আয়োজন করছে এবং দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্যচিত্র সংগ্রহ করছে।
এ বিষয়ে ‘অল্টারনেটিভ আসিয়ান নেটওয়ার্ক অন বার্মা’র প্রতিষ্ঠাতা ডেবি স্টোথার্ড বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের আগেও মিয়ানমারের নাগরিকদের ওপর নজরদারি ছিল বলে ধারণা করা হত। গত বছর ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর সেটাই কেবল আরও জোরাল ভাবে করা হচ্ছে।”
“কিন্তু এত কিছুর পরও লোকজন পরষ্পরের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা খোলা রাখতে মরিয়া। তারা বিভিন্নভাবে নিজেদের ভিন্ন মত প্রকাশ করছে এবং নিপীড়নের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে..এমনকী নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও।”
গত বছর অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে প্রায় দেড় হাজার বিক্ষোভকারীর প্রাণ গেছে। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
প্রায় অর্ধ শতাব্দীর সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরেছিল। যার হাত ধরে সেখানে একাধিক মোবাইল কোম্পানি কাজ শুরু করে। নাগরিকরা ড্রোন কিনতে পারতেন। বিদেশি কোম্পানি থেকে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফ্টওয়্যার ও স্পাইওয়্যার কেনা যেত। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, নাগরিকদের উপর গোয়েন্দা নজরদারিতে এখন এসব প্রযুক্তিই ব্যবহার করছে জান্তা সরকার।
মোবাইল-ইন্টারনেটে যোগাযোগ ও তথ্য সংগ্রহের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমারে একটি খসড়া সাইবার সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ চলছে। যেটি শিগগিরই কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই আইন সাধারণ মানুষের জীবনের উপর সেনাশাসকদের আরো কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।
এখন দুনিয়া জুড়েই স্বৈরাচারী শাসকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নজরদারি করে নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ এবং ভিন্ন মত দমন করতে চাইছে। এজন্য তারা স্পাইওয়্যার ব্যবহার করছে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে।
মিয়ানমারে অবশ্য অভ্যুত্থানের আগেই টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন সব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছে, যাতে সেনাবাহিনী নাগরিকদের যোগাযোগের উপর নজরদারি করতে পারে। অভ্যুত্থানের পর শুধু সেই ব্যবস্থা আরও কঠোর হয়েছে।