তালেবান বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের সাত মাইল (১১ কিলোমিটার) দক্ষিণে চার আসিয়াব জেলায় পৌঁছে গেছে বলে স্থানীয় এক আইনপ্রণেতা আন্তর্জাতিক এক বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন।
Published : 14 Aug 2021, 05:33 PM
বিবিসি জানিয়েছে, আফগানিস্তান সরকার যদি এ তথ্য নিশ্চিত করে তাহলে এটিই হবে কাবুলের সবচেয়ে কাছে তালেবানের সর্বশেষ অবস্থান এবং রাজধানী থেকে বিদ্রোহীদের দূরে রাখার জন্য লড়াই করে আসা আফগান বাহিনীগুলোর জন্য আরেকটি ধাক্কা।
শনিবার তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের ৪০ মাইল (৭০ কিলোমিটার) দক্ষিণের শহর লোগার প্রদেশের পুল-ই-আলম দখল করে নেওয়ার পর থেকেই রাজধানী দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা শুরু করে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। পুল-ই-আলম কাবুলে ঢোকার অন্যতম প্রবেশপথ।
পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে লোগারের প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পুল-ই-আলমে তালেবান যোদ্ধারা খুব বেশি প্রতিরোধের মুখে পড়েননি।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরদিন পুল-ই-আলম দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে রাজধানীতে আক্রমণ চালানোর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান পেয়ে যায় তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ গোয়েন্দা মূল্যায়নে ৩০ দিনের মধ্যে তালেবান কাবুলের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বিদ্রোহীরা বিদ্যুৎ গতিতে রাজধানীর উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
লোগার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-আলম দখলে নেওয়ার পর তালেবান বাহিনী কাবুলের ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দূরে ময়দান শারে পৌঁছানোর পর ব্যাপক লড়াই শুরু হয় বলে জানা গেছে।
তারা ময়দান শারে দখল নেওয়ার পর্যায়ে আছে বলে তালেবান জানিয়েছে।
চারদিকে পবর্তবেষ্টিত কাবুলের আয়তন প্রায় ৪০০ বর্গমাইল (প্রায় এক হাজার বর্গকিলোমিটার)। চারটি প্রধান সড়ক শহরটিতে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণপশ্চিমে ময়দান শহর হয়ে একটি, দক্ষিণে পুল-ই-আলম হয়ে আরেকটি, পূর্বে সুরোবি থেকে একটি ও উত্তরে বাগরাম থেকে আরেকটি মহাসড়ক রাজধানীর দিকে চলে গেছে।
পূর্বে ও উত্তরে তালেবানের অবস্থান অপেক্ষাকৃত দুর্বল, তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
এখন তালেবান আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক প্রাদেশিক রাজধানীসহ দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ও কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কান্দাহারও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।
দেশটির উত্তরাঞ্চলে শুধু মাজার-ই-শরিফ ছাড়া আর প্রায় সব এলাকা ও শহর তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা একমাত্র এই গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতেও লড়াই চলছে।
এ পরিস্থিতিতে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আতঙ্কিত হাজার হাজার বেসামরিক বাসিন্দা পালিয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রাজধানীতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্রোহীরাও এখন রাজধানীর অনেক কাছে পৌঁছে গেছে। তবে তালেবান বিদ্রোহীদের এসব অগ্রবর্তী অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আকাশপথে তালেবানের কোনো শক্তি নেই কিন্তু কামান ও রকেট ব্যবহার করেই তারা সম্প্রতি বহু শহর ও প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিয়েছে।
আফগান সেনাবাহিনী কাবুল রক্ষা করার প্রত্যয় জানিয়েছে। তবে দেশটির সরকার ও তালেবানের মধ্যে যদি কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয় তাহলের হয়তো কাবুলে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হতে পারে।
এরই মধ্যে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, তিনি ‘আরোপিত’ এই যুদ্ধকে ‘আরও মৃত্যুর কারণ হতে দেবেন না’, কিন্তু কীভাবে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
নিজেদের কাবুল দূতাবাস থেকে সব কর্মীকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগান রাজধানীতে পৌঁছানো শুরু করেছেন। ৬০০ ব্রিটিশ সেনাও কাবুলের পথে রয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।