প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খাওয়ার পর ফাটল দেখা দেওয়া একটি জাপানি ট্যাংকার থেকে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় নৌযানটির ক্যাপ্টেনকে গ্রেপ্তার করেছে মরিশাস।
Published : 19 Aug 2020, 08:50 PM
ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্রটির উপকূলে গত ২৫ জুলাই এমভি ওয়াকাশিও নামের ট্যাংকারটি একটি প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খায়।
৬ অগাস্ট ওই জাহাজ থেকে সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে মরিশাস সরকার ওই এলাকায় পরিবেশগত ‘সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থা’ জারি করে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্যাংকারস ওনারস পলিউশন ফেডারেশন লিমিটেড’ ও ‘লে ফ্লচ ডেপলিউশন’ নামের দুটি কোম্পানি উপকূলের তিনটি স্থান থেকে ওই তেল পরিষ্কার করা শুরু করবে; জেলেরাসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনও এতে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে মরিশাসের ন্যাশনাল ক্রাইসিস কমিটি।
ট্যাংকারটিতে থেকে পড়া তেল এরই মধ্যে বিপন্ন প্রবাল প্রাচীরের বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে; এতে মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে।
ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ার এ ঘটনাকে মরিশাসের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন কিছু বিজ্ঞানী।
শনিবার ট্যাংকারটি দু টুকরো হয়ে যায়, তবে তার আগেই জরুরি বিভাগের ক্রুরা সেখানে থাকা অবশিষ্ট তেলের বেশিরভাগ অংশ সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
“আমরা নৌযানটির ক্যাপ্টেন ও এক ক্রুকে গ্রেপ্তার করেছি। শুনানির পর আদালতে তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছে, তারা এখনও আটক কেন্দ্রেই আছেন,” বলেছেন পরিদর্শক সিভা কুথেন।
ট্যাংকারটি প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খাওয়ার আগে মরিশাসের কোস্ট গার্ড নৌযানটিকে ধারাবাহিকভাবে সতর্ক করেছিল বলে দেশটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জাহাজটির যে বিপজ্জনক পথে ছিল, তা নিয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও তাদের দিক থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি, বলেছেন তিনি।
“দুর্ঘটনার ৫দিন আগে তারা যে রুট ঠিক করেছিল, তা ছিল ভুল। জাহাজের নেভিগেশন সিস্টেম নিশ্চয়ই এ বিষয়ে ক্রুদের সিগন্যাল দিয়েছিল, মনে হচ্ছে তারা সেটি অবজ্ঞা করেছিল। ট্যাংকারটিতে ফাটল ধরার পরও তারা সাহায্য চেয়ে কোনো বার্তা পাঠায়নি; কোস্ট গার্ড তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি,” বলেছেন এ কর্মকর্তা।
ক্যাপ্টেনের পাশাপাশি অন্য যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ট্যাংকারটির ডেপুটি ক্যাপ্টেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্যাংকারটিতে একটি জন্মদিনের পার্টি চলছিল বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নৌযানটির ক্রুদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খাওয়ার সময় নাকি আরও আগে ওই পার্টি হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
ধাক্কা খাওয়ার আগে ওয়াইফাই সিগন্যাল পাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্যাংকারটি উপকূলের খুব কাছ দিয়ে চলছিল বলেও বেশকিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হলেও কর্মকর্তারা তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ফোন নেটওয়ার্ক পেতে স্থলের কাছ দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ন্যাশনাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোন সিগনাল পেতেই উপকূলের কাছ দিয়ে ট্যাংকারটি চালানো হচ্ছিল বলে নৌযানটির ক্যাপ্টেন আদালতকে বলেছেন। আগেও এই জলসীমায় জাহাজ চালানোর সময় এমনটা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি ।
প্রবাল প্রাচীরে ধাক্কা খাওয়ার সময় তিনি নৌযানটির দায়িত্বে ছিলেন না বলে ক্যাপ্টেন দাবি করেছেন। দুর্ঘটনার মুহূর্তে ট্যাংকারটি অটোপাইলটে চলছিল না; সেসময় আবহাওয়াও খুব খারাপ ছিল বলে ন্যাশনাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জাপানি ট্যাংকার থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় কী কী ক্ষতি হবে তা এখনি পুরোপুরি বোঝা না গেলেও এর প্রভাব পর্যটননির্ভর মরিশাসের অর্থনীতির উপর কয়েক দশক ধরে থাকতে পারে। দু টুকরো হয়ে পড়া জাহাজটি সরিয়ে নিতেও বেশ কয়েকমাস সময় লাগবে।
মরিশাস উপকূলের কাছে এ নিয়ে চার বছরের দুটি দুর্ঘটনা ঘটল। ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার ওই অঞ্চলে একটি সিগনাল স্টেশন স্থাপন করতে পারে বলেও জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।