যুক্তরাষ্ট্রের লং আইলান্ড জুইশ হাসপাতালের আইসিইউ থেকে ডা. মঙ্গলা নরসিমহানের কাছে শুক্রবার একটি জরুরি কল এলো। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৪০ এর কোটার এক ব্যক্তির অবস্থা শোচনীয়, তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া দরকার কি না তা দেখতে আইসিইউতে এই চিকিৎসককে ডাকা হল।
Published : 14 Apr 2020, 11:32 PM
“আমি আসতে আসতে রোগীকে পেটের ওপর শোয়ানোর চেষ্টা কর এবং দেখ তাতে কাজ হয় কি না,” নারসিমাহ বলেন তার সহকর্মী চিকিৎসকদের।
নারসিমাহর আর আইসিইউতে যাওয়ার দরকার হল না। এই টোটকায় কাজ দিল।
এই তথ্য দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসকরা গুরুতর অসুস্থ করোনাভাইরাস রোগীদের পেটের ওপর শুইয়ে (উপুড় করে শোয়ানো) ফল পাচ্ছেন, এটা তাদের ফুসফুসে অক্সিজেন চলাচল বাড়িয়ে দেয়।
নিউ ইয়র্ক রাজ্যের অলাভজনক হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক নর্থওয়েল হেলথের ক্রিটিকাল কেয়ার বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ডা. নরসিমহান বলেন, “এই পদ্ধতিতে আমরা অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছি, একশভাগ সত্যি।
“এটা খুবই সাধারণ একটি কাজ এবং আমরা দারুণ উন্নতি দেখছি। প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই আমরা এটা চেষ্টা করে দেখতে পারি।”
এ বিষয়ে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল আইসিইউ’র পরিচালক ডা. ক্যাথরিন হিবার্ট বলেন, “একবার যদি দেখেন এটা কাজে দিয়েছে তাহলে আপনি এটা বার বার করতে চাইবেন। এবং আপনি দেখবেন এটা খুব দ্রুত কাজে দেয়।”
করোনাভাইরাস রোগীদের প্রায়ই মৃত্যু হয় এআরডিএস বা অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি ডিসট্রেস সিনড্রোমে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য অসুখেও এই সিনড্রোমে রোগীদের মৃত্যু হয়।
সাত বছর আগে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে ফরাসি চিকিৎসকদের প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, এআরডিএসের রোগী যাদের ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তাদের উপুড় করে রাখা হলে মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে।
তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা এআরডিএস রোগীদের উপুড় করে রাখায় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এখন নভেল করোনাভাইরাস রোগীদের ক্ষেত্রে তারা এই কৌশলের প্রয়োগ দ্বিগুণ করেছে এবং তা ফল দিচ্ছে।
লং আইল্যান্ড জুইশ হাসপাতালে যখন ওই রোগীকে পেটের ওপর শোয়ানো হল, তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন হার (রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা) ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৮ শতাংশ হয়ে দাঁড়াল।
ভেন্টিলেটর সাপোর্টের রোগীদের সাধারণত দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা উপুড় করে রাখা হয়। বাকি সময়টা পিঠের ওপর ভর করে শোয়ানে হয় যাতে চিকিৎসকরা সামনের দিক থেকে দেখে তার চিকিৎসা দিতে পারেন।
ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেটের ওপর রাখলে কাজে দেয় বলে মনে হয়। কারণ এতে ফুসফুসে অক্সিজেন যাওয়া সহজ হয়।
“পেটের ওপর রেখে আমরা তাদের ফুসফুসের একটা অংশকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি, যেটা আগে উন্মুক্ত ছিল না,” বলেন ডা. হিবার্ট।
২০১৩ সালের ফরাসি ওই গবেষণায় শুধু ভেন্টিলেটরের রোগীদের কথা বলা হয়। তাই যারা গুরুতর অসুস্থ নয় তাদের ক্ষেত্রে উপুড় করে রাখাটা কতটা কাজে দেবে তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে এ নিয়ে একটি গবেষণা চলছে। যাদের শ্বাস নিতে ভেন্টিলটর দরকার নয় কিন্তু নাকে নল ঢুকিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার মতো অবস্থা তাদের উপুড় করে রাখলে কোনো ফল পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে।
এখানকার কার্ডিওপালমোনারি সায়েন্সেস বিভাগের চেয়ারপারসন ডেভিড ভিনেস বলেন, “আমরা দেখব উপুড় করা ফলদায়ক কি না। এবং তা ফলপ্রসূ হলে কতক্ষণ তাদের এভাবে থাকা উচিত।”