রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে বর্বরতা চালানো হয়েছে,তাতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে কি না, তা বিচার করে দেখবে এই আন্তর্জাতিক আদালত।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, দ্য হেগের পিস প্যালেসে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার বেলা ৩টায় শুরু হওয়া এ শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি, যিনি গণতন্ত্রের দাবিতে অহিংস আন্দোলনের কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
আর আইসিজেতে এই মামলা করা ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়ার পক্ষে এ শুনানিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে আছেন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত দুই বিচারক। শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। তাদের প্রাথমিক শুনানি হবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা এবং গণহত্যার আলামত সংরক্ষণের আদেশ চাওয়া হয়েছে আইসিজের কাছে।
শুনানির প্রথম দিন মঙ্গলবার গাম্বিয়া তাদের বক্তব্য আইসিজেতে উপস্থাপন করবে। বুধবার মিয়ানমার তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। বৃহস্পতিবার প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তি খণ্ডন করে নিজেদের চূড়ান্ত বক্তব্য জানাবে। এরপর শুরু হবে সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।
এরপর গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।
আইসিজে’র বিধি অনুসারে, জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে।
গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মিয়ানমার।
গাম্বিয়াও এ কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশনের আওতায় দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকাই নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধানেও বাধ্য।
জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।
আর অং সান সু চির বেসামরিক সরকার ‘বিদ্বেষমূলক প্রচারকে উসকে’ দিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ‘আলামত ধ্বংস’ করেছে এবং সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে ‘ব্যর্থ হয়েছে’। এর মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার সরকারও নৃশংসতায় ‘ভূমিকা’ রেখেছে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি দ্য হেগের আদালতে যে সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে লড়ছেন, সেই সেনাবাহিনীই এক সময় তাকে বছরের পর বছর গৃহবন্দি করে রেখেছিল।
নিজের দেশে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় সু চি এখন সেই সেনাবাহিনীকে রক্ষার জন্য পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।
অবশ্য দেশে সু চি বীরের মর্যাদাই পাচ্ছেন। তার পক্ষে রাজপথে, অনলাইনে ব্যাপক প্রচার চলছে। ‘সু চির পাশে দাঁড়াও’ লেখা বিলবোর্ড, ব্যানারও শোভা পাচ্ছে রাস্তায়।
আরও খবর