জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নতুন ধরনের ‘আরও উন্নত হাইড্রোজেন বোমা’ তৈরির দাবি করেছে পিয়ংইয়ং।
Published : 03 Sep 2017, 11:09 AM
রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ এই দাবির সঙ্গে কিম জং উনের কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করেছে, যেখানে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।
পিয়ংইয়ংয়ের এই ‘ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতাসম্পন্ন’ বোমা তৈরির দাবির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে টেলিফোনে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
দুই নেতা কোরীয় উপদ্বীপ ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনায় দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার উপর জোর দেন বলে জাপানের ডেপুটি চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়াসুতোশি নিশিমুরা সাংবাদিকদের জানান।
“উত্তরের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে তারা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বিষয়ে পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন।”
অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সীমার মধ্যেই তিন দেশের ধারাবাহিক সমন্বয় এগিয়ে নিতে চান।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই জুলাইয়ে দুটি দূর পাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর গত সপ্তাহে জাপানের ওপর দিয়ে একটি মাঝারি পাল্লার হোয়াসং-১২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে উত্তর কোরিয়া।
জুলাইয়ে ছোড়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ১০ হাজার কিলোমিটার বা তারও বেশি উড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়া এখন এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে এর আগে কেসিএনএ ইঙ্গিত দিয়েছে।
রোববার তারা নতুন তারা উন্নত প্রযুক্তির হাইড্রোজেন বোমা তৈরিতে ‘সফলতার’ দাবি করে, যা আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রে জুড়ে দেওয়া সম্ভব।
“দশ কিলোটন থেকে কয়েকশ কিলোটন পর্যন্ত বিস্ফোরণ ক্ষমতাসম্পন্ন হাইড্রোজেন বোমাটি মাল্টি-ফাংশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার নিউক যা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারবে; প্রচণ্ড শক্তিশালী বিদ্যুৎচৌম্বকীয় স্পন্দনের মাধ্যমে এটি উঁচুতেও বিস্ফোরিত হয়ে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম,” বলে কেসিএনএ।
নতুন এই হাইড্রোজেন বোমা নিজস্ব প্রক্রিয়া ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বলে কিম জং উনকে উদ্ধৃত করে জানায় রাষ্ট্রীয় এ সংবাদসংস্থাটি।
তবে উত্তর কোরিয়া সত্যি সত্যি এই ধরনের শক্তিশালী বোমা তৈরি করতে পেরেছে কী না তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতেও হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষার দাবি করেছিল পিয়ংইয়ং। ওই পরীক্ষায় আশপাশের অঞ্চলে তীব্র ভূকম্পন অনুভূত হলেও সেটি আদতে হাইড্রোজেন বোমা কীনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
“দশ থেকে শত কিলোটন ধ্বংসযজ্ঞের উল্লেখ করলেও এটি পরিপূর্ণ একটি হাইড্রোজেন বোমা নাও হতে পারে, বড়জোর এটি একটি শক্তিশালী পারমানবিক অস্ত্র,” বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়াংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফার ইস্টার্ন স্টাডিজের সামরিক বিশেষজ্ঞ কিম ডং-ইয়াব।
সত্যিকারের একটি হাইড্রোজেন বোমা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা যুক্তরাষ্ট্রের পারমানবিক বোমার মতো বিরাট ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে বলে জানান কিম, যা উত্তর কোরিয়ার চালানো পারমাণবিক পরীক্ষার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা চালানো ওই পারমাণবিক অস্ত্রের ধ্বংসের ক্ষমতা ১০ থেকে ১৫ কিলোটনের বেশি হবে না বলে ধারণা করছে রয়টার্স।