ভারতের হরিয়ানায় আশ্রমের সেবিকা ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের অনুসারীদের বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
Published : 26 Aug 2017, 02:29 AM
হরিয়ানা ছাড়িয়ে পাঞ্জাব ও দিল্লিতে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল।
বাবা রাম রহিম নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ডেরা সাচ্চা সওদা নামে যে আশ্রমের নেতৃত্ব দেন, তা শিখ, হিন্দু, মুসলিম-সব ধর্মের চেতনার মিশেলে তৈরি। ভারতের গণমাধ্যমে অনেক সময় তাকে বলা হয় ‘রকস্টার বাবা’।
ভারতে তার অনুসারীদের সহিংসতায় জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। ২০০২ সালে এক সাংবাদিক খুন এবং ২০১০ সালে ডেরার সাবেক ব্যবস্থাপক ফকির চাঁদকে হত্যায় রাম রহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দিলে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তার অনুসারীরা। ২০০৭ সালে শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা রাম রহিমের জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৫ অগাস্ট, রাজস্থানের গঙ্গানগর জেলার শ্রী গুরুসর মোদিয়া গ্রামে। সেখানেই স্কুলে লেখাপড়া করেছেন তিনি।
রাম রহিম ডেরা সাচ্চা সওদার নেতৃত্বে আসেন ১৯৯০ সালে। হরিয়ানার সিরসায় ১৯৪৮ সালে এই ডেরা গড়ে তুলেছিলেন শাহ মস্তানা নামের এক ‘ধর্মগুরু’।
জাকজমকপূর্ণ পোশাক পরে গানের ভিডিওতে আসায় অনেকে তাকে ‘রকস্টার বাবা’ বলেন।
তিনটি চলচ্চিত্র বানিয়েছেন রাম রহিম, তাতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। অনেক বিতর্কের পর সেগুলো কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় মুক্তি পায়। হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ উত্তরপ্রদেশের অনেক এলাকার তরুণ-যুবক এবং নারীদের মধ্যে সেগুলো বেশ জনপ্রিয়।
তার অভিনীত চলচ্চিত্র দেখতে হাজার হাজার গাড়ির বহর নিয়ে এসে তার অনুসারীরা কয়েকবার দিল্লির কাছের গুরগাঁও অচল করে দেন।
রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ২০০২ সালে, তার আশ্রমের এক নারী সাধিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেনামী চিঠিতে ওই অভিযোগ করেন। ওই চিঠির ভিত্তিতে অভিযোগ তদন্তে সিবিআইকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মাথায় মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। শুক্রবার ২০০ গাড়ির বহর নিয়ে হরিয়ানার আদালতে আসেন রাম রহিম। রায় ঘোষণার পর প্রথমে তাকে হেলিকপ্টারে করে একটি গেস্ট হাউজ এবং পরে সেখান থেকে বিশেষ কারাগারে নেওয়া হয়।
কথিত এই গুরুকে সব সময় ঘিরে থাকে তার সশস্ত্র ব্যক্তিগত রক্ষীদল।
সোমবার রাম রহিমের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করার কথা আদালতের। তার ন্যূনতম সাত বছরের সাজা হবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।