ইরানের পার্লামেন্ট ভবন এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে বন্দুকধারীদের জোড়া হামলায় অন্তত ১২জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে বহু মানুষ।
Published : 07 Jun 2017, 01:38 PM
বুধবার সকালে প্রায় একই সময়ে দুই জায়গায় ওই হামলার পর পার্লামেন্টে কয়েক ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে হামলাকারীদের গোলাগুলি চলে।
আর খোমেনির মাজারের হামলাকারী আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয় বলে বিবিসির খবর।
ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, আরও একটি হামলার পরিকল্পনা তারা নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করে পার্লামেন্টের ভেতরে বন্দুকধারীদের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
অবশ্য ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এই হামলার জন্য দায়ী করেছে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ সৌদি আরবকে।
গত দেড় দশক ধরে বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত ইরানে এর আগে এমন হামলা হয়নি।
যেভাবে হামলা
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে কয়েকজন বন্দুকধারী নারীদের মত বোরখা পরে পার্লামেন্ট ভবনে ঢোকে বলে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর। বিবিসি লিখেছে, হামলাকারীদের হাতে ছিল কালাশনিকভ রাইফেল।
ইলিয়াস হযরতি নামের একজন এমপি ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে বলেন, অন্তত তিনজন হামলাকারীকে তিনি দেখেছেন, যাদের একজনের হাতে পিস্তল এবং বাকি দুজনের হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল ছিল।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সাংবাদিক রয়টার্সকে বলেন, “যখন গুলি শুরু হল, আমি পার্লামেন্টের ভেতরেই ছিলাম। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি দেখলাম দুইজন লোক নির্বিচারে গুলি করছে।”
ইরানের বার্তা সংস্থা আইএসএনএ জানায়, গুলি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারক্ষীরা অন্তত একজন হামলাকারীকে ঘিরে ফেলেন।
তাদের খবরে পার্লামেন্ট ভবনে চারজনকে হামলাকারীরা জিম্মি করেছে বলা হলেও ইরানি কর্তৃপক্ষ ওই ধরনের কোনো পরিস্থিতির খবর অস্বীকার করেছে।
তবে পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর বড় ধরনের অভিযান চলতে দেখা গেছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসা ভিডিওতে তুমুল গোলাগুলির শব্দের সঙ্গে ধোঁয়াও দেখা গেছে।
ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো পরে জানায়, চারজন হামলাকারী পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে।
এর মোটামুটি আধা ঘণ্টা পর আরেক বন্দুকধারী ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মাজারে ঢুকে গুলি শুরু করে।
তেহরানের গভর্নর হোসেইন হাশেমি পরে বলেন, মাজারে গুলি চালানোর পর এক হামলাকারী সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। আরেকজন নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহত হন।
ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আত্মঘাতী ওই হামলাকারী ছিলেন একজন নারী। ঘটনাস্থলের কিছু ছবিতে গ্রেনেড ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের ম্যাগাজিনও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, নিহত ১২ জনের মধ্যে হামলাকারীদের সংখ্যাও ধরা হয়েছে কি না- তা স্পষ্ট নয়। কোন ঘটনায় কতজন নিহত হয়েছে, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে দুই হামলায় আহত প্রায় ৪০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের তথ্য।
বিবিসি লিখেছে, সুন্নি ধারার দল আইএস এতদিন শিয়া সংখ্যগরিষ্ঠ ইরানের মূল ভূখণ্ডে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও সাম্প্রতিক সময়ে ফার্সি ভাষায় তাদের প্রচার জোরালো হয়ে উঠতে দেখেছেন জঙ্গিবাদ বিশ্লেষকরা। তাদের ওই প্রচারের লক্ষ্য ছিল মূলত ইরানের সংখ্যালঘু সুন্নিরা।