সেপ্টেম্বরে কুর্স্কের যুদ্ধে হাত হারানো ইউক্রেইনীয় সেনা অলেক্সি দেশেভি জানান, তিনি এই অভিযানের কোনো যুক্তি দেখেন না।
Published : 22 Mar 2025, 08:52 PM
ডিসেম্বরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাভলোর সঙ্গে যখন শেষবারের মতো বার্তা বিনিময় করেন তখন সে যে ইউক্রেইনীয় সেনা হিসেবে রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে লড়াইরত আছে সে বিষয়ে মারিয়া পাঙ্কোভার কোনো ধারণাই ছিল না।
মারিয়া বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন যখন পাভলোর এক সহসৈনিক কয়েকদিন পার তাকে জানান, তার বন্ধু ইউক্রেইনের ৪৭তম মাগুরা ব্রিগেডের যুদ্ধ প্রকৌশলী পাভলো হুমেনিউক (২৪) কুর্স্কের নভোইভানিভকা গ্রামের কাছ থেকে ৬ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন।
এরপর থেকে প্রায় চার মাস পার হতে চলল কিন্তু পাভলোর ভাগ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন পাঙ্কোভা। পাভলো বেঁচে আছেন না মারা গেছেন তা বের করার আশায় পাঙ্কোভা টেলিগ্রাম ও ফেইসবুকে সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
পাঙ্কোভার (২৫) বিশ্বাস, ইউক্রেইন রাশিয়ায় যে ঝুঁকিপূর্ণ অনুপ্রবেশ চালিয়েছে তার ব্যয় সম্ভবত অনেক বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেইনের অনেকেই এমন মত প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে চলতি মাসে তীব্র যুদ্ধের পর ইউক্রেইনের অধিকাংশ সেনা কুস্র্ক থেকে পশ্চাদপসরণের পর তারা এমনটি জানিয়েছেন।
পাঙ্কোভা বলেন, “এটা এতো মূল্যবান ছিল কি না, আমি নিশ্চিত নই।”
নিজের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর কথা বলতে বলতে তার চোখ গড়িয়ে পানির বড় বড় ফোঁটা ঝরে পড়ছিল।
‘আমরা আক্রমণকারী নই। আমরা শুধু আমাদের ভূখণ্ড ফেরত চাই। আমরা রাশিয়ার অংশ চাই না,” বলেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেন, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল অন্য যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে রাশিয়ার বাহিনীগুলোকে সরিয়ে নিতে মস্কোর ওপর চাপ তৈরি করা এবং ইউক্রেইনের সীমান্ত এলাকাগুলোতে রাশিয়ার হামলা বন্ধ করা।
এই অভিযানের ‘লক্ষ্য অধিকাংশই অর্জিত হয়েছে’ বলে এই জেনারেল স্টাফ দাবি করেন।
গত বছরের অগাস্টে ইউক্রেইনীয় সেনারা যখন কুর্স্কে আক্রমণ করে তা রাশিয়া ও বিশ্বকে বিস্মিত করে। ১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে নাৎসি আক্রমণের পর এটি রাশিয়ার সার্বভৌম ভূখণ্ডে হওয়া সবচেয়ে বড় হামলা ছিল।
প্রায় বিনাবাধায় ইউক্রেইনীয় সেনারা কুর্স্কের ভেতরে ঢুকে পড়ে দ্রুত রাশিয়ার ১৩৭৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত সেনা না থাকায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সরু একটি এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
কুর্স্ক অভিযানে কিইভ তাদের মেরিন ও বিমান বাহিনীর শীর্ষ কিছু ইউনিটকে ব্যবহার করেছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা বড় এলাকা দখলে রাখার মতো পর্যাপ্ত ছিল না।
ইউক্রেইনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক পার্লামেন্ট কমিটির সদস্য আইনপ্রণেতা সেরহি রাখমানিন বলেন, “একেবারে শুরু থেকেই রসদ সরবরাহ গুরুতরভাবে জটিল ছিল কারণ আমরা কুস্র্ক অঞ্চলে প্রবেশের পর পর্যাপ্ত গভীরতা নিশ্চিত করেছিলাম কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত বিস্তার নিশ্চিত করিনি।”
শুরু থেকেই কুর্স্কের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া সেনা সংখ্যায় এগিয়ে ছিল। গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়া অতিরিক্ত সেনা হিসেবে অভিজাত ইউনিটগুলোকে ও শীর্ষ ড্রোন বাহিনীকে নিয়ে কুর্স্কে নিয়ে এলে পরিস্থিতি উল্টে যায়। রাশিয়ার অতিরিক্ত এসব সেনারা পাশাপাশি সেখানে উত্তর কোরিয়ার বাহিনীও হাজির হয়।
ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সামরিক ব্লগাররা জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেইনের অবস্থান ঘিরে আক্রমণ তীব্র করে তোলে এবং একটি প্রধান সরবরাহ পথের ফায়ারিং রেঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
রাখমানিন বলেন, “তারা আমাদের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধতা করা দলের সংখ্যাই শুধু বৃদ্ধি করেনি, পাশাপাশি গুণমানও বৃদ্ধি করে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কুর্স্কে যুদ্ধে উত্তর কোরীয় সেনাদের যোগ দেওয়ার কথা কখনও স্বীকার করেননি।
কুর্স্কের সুদঝা শহর থেকে ইউক্রেইনীয় বাহিনী পশ্চাদপসরণ করেছে, ১৬ মার্চ কিইভ নিশ্চিত করে। এতে ইউক্রেইনীয়দের মধ্যে এই অভিযান থেকে কী লাভ হল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ও বিতর্ক দেখা দেয়।
সেপ্টেম্বরে কুর্স্কের যুদ্ধে হাত হারানো সেনা অলেক্সি দেশেভি (৩২) জানান, তিনি এই অভিযানের কোনো যুক্তি দেখেন না।
কিইভের একটি হাসপাতালে তিনি রয়টার্সকে বলেন, “এই অভিযান শুরু করা আমাদের কোনোভাবেই উচিত হয়নি।”
এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেইন যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যে রাশিয়া কুর্স্ক পুনরুদ্ধার করায় সম্ভাব্য দরকষাকষির একটি উপায় কিইভের হাতছাড়া হয়ে গেল। রাশিয়া ইউক্রেইনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে আছে, সেটির বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে তোলার মতো আর কোনো উপায় কিইভের থাকলো না।