ক্লেমানসো-শ্রেণির এই রণতরীটি চার দশক ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ছিল, তখন এর নাম ছিল ‘ফোস’, এটি ৪০টি বিমান বহন করতে পারতো।
Published : 05 Feb 2023, 10:52 AM
ব্রাজিল তাদের বাতিল একটি বিমানবাহী রণতরী আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির নৌবাহিনী।
১৯৬০-র দশকে ফ্রান্সে নির্মিত এই রণতরী সমুদ্র ও সামুদ্রিক খাদ্যের চেইনকে দূষিত করবে, পরিবেশবাদীদের এমন সতর্কবার্তার পরও শুক্রবার ব্রাজিলের উত্তরপূর্ব উপকূলের কাছে এটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে তুরস্ক ৩২ হাজার টনের এই পরিত্যক্ত নৌযানটিকে তার জলসীমায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার পর সেটিকে ব্রাজিলে ফিরিয়ে আনা হয়, তারপর থেকে এটি উপকূলেই ভাসমান ছিল।
রণতরী সাও পাওলোকে ‘পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে’ ডুবানো হয়েছে, বিবৃতিতে বলেছে ব্রাজিলের নৌবাহিনী।
উপকূল থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরে ব্রাজিলের আওতাধীন জলসীমায় সাও পাওলোর খোল ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে সমুদ্রের গভীরতা ছিল ৫ হাজার মিটার; মৎস্য আহরণ ও বাস্তুসসংস্থানের ক্ষতি কমাতে ওই জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়, বলেছে তারা।
৯ টন অ্যাসবেসটসসহ বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত দ্রব্য থাকায় রণতরীটি ডুবানো বন্ধ রাখতে একাধিক কেন্দ্রীয় কৌঁসুলি এবং পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস ব্রাজিল সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল।
“বিমানবাহী রণতরী সাও পাওলোকে ডুবিয়ে টন টন অ্যাসবেসটস, পারদ, সীসা ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ সমুদ্রতলে ফেলা হল,” ব্রাজিলের নৌবাহিনী সমুদ্র সুরক্ষাকে অবজ্ঞা করেছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলেছে গ্রিনপিস।
ক্লেমানসো-শ্রেণির এই রণতরীটি চার দশক ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ছিল, তখন এর নাম ছিল ‘ফোস’, এটি ৪০টি বিমান বহন করতে পারতো।
সমর বিশেষজ্ঞ ও মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক দপ্তরের কর্মী পেপি রেজেনদে জানান, ব্রাজিলের নৌবাহিনী ১৯৯৮ সালে মাত্র এক কোটি ২০ লাখ ডলারে এই রণতরীটি কিনে নেয়, কিন্তু এর সংস্কারের জন্য দরকার ছিল আরও ৮ কোটি ডলার; শেষ পর্যন্ত আর ওই সংস্কার করতে পারেনি ব্রাজিল।
রণতরীটি বাতিল হয়ে পড়ার পর তুরস্কের মেরিন রিসাইক্লিই কোম্পানি সোক দেনিজচিলিক টিস স্তি এর খোল এক কোটি ৫ লাখ ডলারে কিনে নেয়। কিন্তু তুরস্ক তার জলসীমায় এটিকে ঢুকতে না দিলে নৌযানটিকে আটলান্টিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
ব্রাজিলের নৌবাহিনীর পরে রণতরীটিকে ব্রাজিলের শিপইয়ার্ডে রেখেই মেরামতের প্রস্তাব দেয়; কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ওই পরিকল্পনা বাদ দেয় এবং নৌযানটিকে সমুদ্রের গভীরে ডুবিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গ্রিনপিস বলছে, বিষাক্ত পদার্থসহ জাহাজ ডুবিয়ে ব্রাজিল বাসেল কনভেনশন, সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধে হওয়া লন্ডন কনভেনশন ও অবিরাম জৈব দূষণ বিষয়ক স্টকহোম কনভেনশন লংঘন করেছে।
“জাহাজটিতে অন্যদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করা ও লাখ লাখ ডলার নষ্ট করার সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছে ব্রাজিলের নৌবাহিনী,” বলেছে তারা।