বাড়ির দেয়ালে আটকানো সুইসাইড নোটে তারা লিখেছেন, এক ছেলে তিনবার ও আরেক ছেলে দুইবার তাদের মারধর করেছেন।
Published : 11 Oct 2024, 08:35 PM
ভারতের রাজস্থানে নিজের সন্তানদের নির্মমতার শিকার হয়ে এক বৃদ্ধ দম্পতি আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্পত্তির দখল নিতে সন্তানরা তাদের নির্যাতন করতো এমন অভিযোগ করে গেছেন ওই দম্পতি।
জানা গেছে, ৭০ বছর বয়সী হাজারিরাম বিষ্ণোই ও তার ৬৮ বছর বয়সী স্ত্রী চাওয়ালি দেবী বাড়ির পানির ট্যাংকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এই দম্পতি বাড়ির দেয়ালে আটকানো একটি কাগজে তাদের আত্মহত্যার কারণ জানিয়ে গেছেন। এতে বলা হয়েছে, এই দম্পতির ছেলেরা ও তাদের স্ত্রীরা অন্তত পাঁচটি ঘটনায় তাদের মারাধর করেছেন আর তাদের হত্যা করার হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি খাবার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এক ছেলে মাকে বলেছে, “যাও, একটা বাটি নিয়ে ভিক্ষা করোগে।”
এই দম্পতি রাজস্থানের নাগৌর জেলার নাগৌর শহরের কালনি কলোনি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। বৃহস্পতিবার তাদের বাড়ির একটি পানির ট্যাংক থেকে ওই দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই দম্পতির চার সন্তান। তাদের মধ্যে দুইজন ছেলে ও দুইজন মেয়ে।
বাড়ির দেয়ালে আটকানো দুই পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে ওই দম্পতি লিখেছেন, তাদের ছেলে রাজেন্দ্র তাদের তিনবার মারধর করেছেন আর আরেক ছেলে সুনিল দুইবার।
তারা আরও জানিয়েছেন, ছেলে ও মেয়েরা এসব ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য বা থানায় কোনো অভিযোগ না দেওয়ার জন্য তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এমন কিছু করলে ঘুমের মধ্যে তাদের মেরে ফেলবে তারা।
ওই নোটে রাজেন্দ্র ও তার স্ত্রী রোশনি; সুনিল ও তার স্ত্রী অনিতা ও তাদের সন্তান প্রণব আর ওই দম্পতির কন্যা মঞ্জু ও সুনিতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও কয়েকজন আত্মীয়ের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই দম্পতি উল্লেখ করেছেন, তাদের নামে থাকা সব সম্পত্তি সন্তানরা কেড়ে নিতে চাইতো আর আত্মীয়রা তাদের ইন্ধন দিতো।
নোটে আরও বলা হয়েছে, সন্তানরা ইতোমধ্যেই প্রতারণা করে ও তাদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে তিনটি প্লট ও একটি গাড়ির মালিকানা নিয়ে নিয়েছিল। রাজেন্দ্র, মঞ্জু ও সুনিতার নামে হস্তান্তর করা গাড়ি বিক্রির এবং সুনিল ও তার স্ত্রী অনিতার নামে হস্তান্তরা করা কারনি কলোনির একটি বাড়ির বিস্তারিত বিবরণ এতে দেওয়া হয়েছে।
এগুলো তাদের কাছ থেকে নেওয়ার পর সন্তানরা তাদের কোনো খাবার দিতে অস্বীকার করে আর ফোনে প্রতিদিন গালিগালাজ করতো বলে অভিযোগ করেছেন ওই দম্পতি।
নোটে তারা লিখেছেন, তাদের ছেলে সুনিল একদিন ফোন করে তাদের বলেন, “একটা বাটি নিয়ে ভিক্ষা করগো। আমি তোমাদের খাবার দেবো না। তোমরা যদি কাউকে কিছু বলো আমি তোমাদের মেরে ফেলবো।”
নাগৌরের পুলিশ সুপার নারায়ণ তোগাস জানান, হাজারিরাম ও চাওয়ালির বাড়িতে কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রতিবেশীরা খোঁজ নিতে যান, তখন খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে পানির ট্যাংকের মধ্যে তাদের মৃতদেহ দেখতে পান তারপর তারা পুলিশকে খবর দেন।
তোগাস বলেন, “হাজারিরামের পকেটে বাড়ির চাবিটি পাওয়া যায় আর পুলিশের ফরেনসিক টিম সাক্ষ্যপ্রমাণ যোগাড় করেছে। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা বাড়িটিতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার চেষ্টা করছি। একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।”
এর আগে ওই দম্পতির ছেলে সুনিল থানায় একটি জিডি করে জানিয়েছিল, তার বাবা-মা সন্তানদের আত্মহত্যার মামলায় জড়ানোর কথা বলেছিলেন।
ওই দম্পতির মৃত্যু মঙ্গলবার হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। তারা জানিয়েছে, তারা তদন্ত শুরু করে ‘সবদিক খতিয়ে দেখছে’।