“ইমরান খান আমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত আমরা এই পদযাত্রা শেষ করব না,” বলছেন তার স্ত্রী।
Published : 26 Nov 2024, 12:15 PM
পাকিস্তানে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ইসলামাবাদে প্রবেশ করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
হাজারা জনতা ইন্টারচেঞ্জ থেকে শুরু হওয়া বহরটি ইসলামাবাদের ‘ডি চক’ নামে পরিচিত রেড জোনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই রেড জোনে আছে পার্লামেন্ট ভবন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা, দূতাবাস এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়।
বহরটি অগ্রসর হওয়ার সময় গাজী-বারোথা সেতুতে পুলিশের শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল, সেখানে তীব্র গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর এবং বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আইয়ুবের নেতৃত্বে এই বহর ইসলামাবাদে গেছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, পুলিশি কড়াকড়ির পরও ওমর আইয়ুবের গাড়িবহর হাজারা ইন্টারচেঞ্জে পাঞ্জাব পুলিশ বাহিনীকে পিছু হটাতে সক্ষম হয়। হাজারা বিভাগের বহরে নেতৃত্বদানকারী আলি আমিন গান্দাপুর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে গাড়িবহরকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
পুলিশি বাধা কাটিয়ে যাত্রা অব্যাহত রাখা বহরের দৈর্ঘ্য দুই কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। হাজারা মোটরওয়েতে সংঘর্ষ ও ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে, একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এসব সহিংসতায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। আর ইসলামাদে সংঘর্ষের মধ্যে মুবাশ্বির নামে এক পুলিশ কনস্টেবল মারা গেছেন, আহত হয়েছে ৭০ জনেরও বেশি।
‘আলোচনা চলমান’
রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে সোমবার ইমরানের খানের সঙ্গে ৯০ মিনিটের সাক্ষাতে মিলিত হন পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর খান, খাইবার পাখতুনখাওয়ারের তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সাঈফ এবং পিটিআই নেতা আলী মোহাম্মদ খান। সাক্ষাৎ শেষে গওহর বলেন, তাদের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বলেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে গওহর বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের কৌশলের সঙ্গে ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিক্ষোভ ঘিরে সরকারের সঙ্গে চলমান আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার গওহর বলেন, যথাসময়ে সেই তথ্য জানানো হবে। আলোচনা এখনও চলছে।
আন্দোলনের নেপথ্যে
বিভিন্ন অভিযোগে এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি আছেন পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। মামলা মোকাদ্দমায় থাকলেও তার জনপ্রিয়তা এখনো তুঙ্গে।
তার স্ত্রী বুশরা বিবি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ইমরানের মুক্তি মেলা না পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
ইমরানের খানের দল কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তবে সবশেষ পদযাত্রা শুরু হয় তার ‘চূড়ান্ত ডাকে’ সাড়া দিয়ে। ইমরান সমর্থকদের বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজধানীতে অবস্থান করতে।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এ পদযাত্রায় চারটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে আছে- ইমরান খানসহ সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি; সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিল; গণতন্ত্র ও সংবিধান পুনরুদ্ধার এবং ‘চুরি যাওয়া’ ম্যান্ডেট ফিরিয়ে দেওয়া।
পদযাত্রায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তাদের মধ্যে ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি রয়েছেন।
তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, “ইমরান খান আমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত আমরা এই পদযাত্রা শেষ করব না।
“আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকব এবং আপনাদের সমর্থন লাগবে। এটা শুধু আমার স্বামীর কথা নয়, এই দেশ ও তার নেতার কথা।”
গত জানুয়ারিতে ইমরান খানের পাশাপাশি বুশরা বিবিকেও সাজা দেওয়া হয়েছিল, তবে অক্টোবরের শেষের দিকে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
ইমরান কারাগারে থাকলেও তিনি এখনও পাকিস্তানের বিরোধী রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তি। দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার মতবিরোধের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২২ সালে পার্লামেন্টে ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
দুর্নীতি থেকে শুরু করে সহিংসতায় উসকানি দেওয়া কিংবা বুশরা বিবিকে অবৈধভাবে বিয়ে করার মত সব অভিযোগই ইমরান অস্বীকার করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে তার দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অপ্রত্যাশিত জয় পায়, যদিও তা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
ইমরান খান বর্তমানে সরকারে থাকা দুটি দল পিএমএল-এন ও পিপিপির বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন। তবে সরকারের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।