শপথের পর থেকেই জোর আলোচনা চলছিল বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না তা নিয়ে।
Published : 11 Jun 2024, 02:08 AM
টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরদিনই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী; যাতে প্রধান সব মন্ত্রণালয়ে পুরনো মুখ থাকারই খবর দিয়েছে ভারতের প্রধান সব সংবাদমাধ্যম।
নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে রোববার শপথ নেন মোদী ও তার নতুন মন্ত্রিসভার ৭১ সদস্য। তখন থেকে জোর আলোচনা চলছিল, কাকে কোন মন্ত্রণালয় দেওয়া হচ্ছে; কোনোটিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না।
সরকার গঠনের পর সেই আলোচনা চলার মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী, যিনি টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর রেকর্ড স্পর্শ করেছেন।
এদিন সন্ধ্যার বৈঠকের পর থেকে প্রকাশ্যে আসতে থাকে মন্ত্রীদের মধ্যে কাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতে দেখা গেছে বেশির ভাগ বড় মন্ত্রণালয়ে আগের মুখই রয়েছে; যাদের মধ্যে রাজনাথ সিং প্রতিরক্ষা, অমিত শাহ স্বরাষ্ট্র, এস জয়শঙ্কর পররাষ্ট্র ও নির্মলা সীতারমন অর্থের দায়িত্বেই রয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি মোদীর তৃতীয় মেয়াদে নবগঠিত মন্ত্রিসভার ৭১ জন কে কোন মন্ত্রণালয় পেয়েছেন, তার একটি তালিকা দিয়েছে সোমবার রাতে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, আনন্দবাজার পত্রিকার মত প্রধান প্রধান ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী
এনডিটিভির তালিকার তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজের অধীনে কর্মচারী, জন-অভিযোগ ও পেনশন মন্ত্রণালয় রেখেছেন। পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তি, মহাকাশবিষয়ক মন্ত্রণালয়েরও নেতৃত্ব রেখেছেন নিজের কাছে।
রাজনাথ সিং
মোদীর পরই রোববার শপথ নেন রাজনাথ সিংহ। উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। গতবারের মত এবারও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রয়েছে তার হাতে।
অমিত শাহ
রাজনাথের পর শপথ নেন মোদীর ‘ডান হাত’ খ্যাত অমিত শাহ। তিনি গুজরাতের গান্ধীনগর থেকে জয়ী হয়েছেন। এনডিএ সরকারের দ্বিতীয় দফার মত এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘সহযোগিতা মন্ত্রণালয়’ এর দায়িত্ব পড়েছে তার কাঁধে।
নিতিন গডকড়ি
তার মন্ত্রণালয়ও বদলায়নি। এবারও তিনি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
জেপি নাড্ডা
বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা রোববার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি রাজ্যসভার সদস্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। জৈবসার এবং রাসায়নিক মন্ত্রণালয়ও তার হাতে দিয়েছেন মোদী।
শিবারাজ সিং
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। পাশাপাশি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ও তাকে দিয়েছেন মোদী। বিদিশা লোকসভা আসনে লড়ে জয়ী হন তিনি।
নির্মলা সীতারমন
নির্মলা সীতারামন অর্থমন্ত্রী হিসেবে বহাল রইলেন। করপোরেট-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও তাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি রাজ্যসভার সংসদ সদস্য। লোকসভা ভোটে দাঁড়াননি তিনি।
এস জয়শঙ্কর
ভারতের সাবেক আমলা এস জয়শঙ্কর গতবারের সরকারের মত এবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি লোকসভা ভোটে লড়াই করেনি। রাজ্যসভার সদস্য তিনি।
মনোহর লাল খাট্টার
‘কাশ্মিরি মেয়েদের বিয়ে করে আনতে হরিয়ানার তরুণদের উস্কানি দেওয়া’ হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার পেয়েছেন বিদ্যুৎ ও নগরোন্নয়ন মত বড় মন্ত্রণালয়। হরিয়ানার কর্নাল লোকসভা আসন থেকে জয় পেয়েছেন তিনি।
এইচডি কুমারস্বামী
জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী কর্ণাটকের মাণ্ড্য আসন থেকে জয়ী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প ও ইস্পাত মন্ত্রী করা হয়েছে তাকে।
পীযুষ গয়াল
পীযুষ গয়ালকে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। মুম্বাই উত্তর লোকসভা আসন থেকে বিজেপির টিকিটে সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি।
ধর্মেন্দ্র প্রধান
ওড়িশার সম্বলপুর লোকসভা আসন থেকে বিজয়ী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে শিক্ষামন্ত্রী করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
জিতনরাম মাঝি
এইচএএম পার্টির নেতা জিতনরাম মাঝিকে দেওয়া হয়েছে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রণালয়। বিহারের গয়া লোকসভা আসনের সংসদ সদস্য তিনি।
রাজীবরঞ্জন সিং
রাজীবরঞ্জন (লালন) সিংকে দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতি রাজ, মৎস্য, পশুপালন, ডেয়ারি মন্ত্রণালয়। বিহারের মুঙ্গের আসন থেকে জেডিইউ এর টিকিটে লোকসভায় জিতেছেন তিনি।
সর্বানন্দ সোনোয়াল
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে দেওয়া হয়েছে জাহাজ, বন্দর ও জলপথ মন্ত্রণালয়।
কিঞ্জারাপু নাইডু
টিডিপির সংসদ সদস্য কিঞ্জারাপু রামমোহন নাইডুকে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বীরেন্দ্র কুমার
বীরেন্দ্র কুমারকে সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন মোদী। মধ্যপ্রদেশের টিকমগড় থেকে লোকসভার সদস্য হয়েছেন তিনি।
জুয়েল ওরাওঁ
কেন্দ্রীয় আদিবাসীবিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে জুয়েল ওরাওঁকে।
প্রহ্লাদ জোশী
প্রহ্লাদ জোশীকে পেয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা, খাদ্য, জনবণ্টন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে।
অশ্বিন বৈষ্ণব
অশ্বিনী বৈষ্ণব এবারও পেয়েছেন রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব হাতে। তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও দেওয়া হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন তিনি।
আরও যত মন্ত্রী
এ ছাড়া মোদীর মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে
গিরিরাজ সিং বস্ত্র মন্ত্রণালয়, জ্যোতিরাদিত্য শিণ্ডে টেলিযোগাযোগ ও উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।
ভূপেন্দ্র যাদব পেয়েছেন পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত পেয়েছেন সংস্কৃতি এবং পর্যটন, অন্নপূর্ণা দেবীর হাতে গেছে মহিলা ও শিশু, কিরেণ রিজিজুর দায়িত্বে পড়েছে সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মনসুখ মাণ্ডবীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম এবং কর্মসংস্থানও পেয়েছেন।
হরদীপ সিংহ পুরীকে দেওয়া হয়েছে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস,
জি কিষাণ রেড্ডিকে কয়লা ও খনি, চিরাগ পাসোয়ান খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।