ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
Published : 09 Jun 2024, 07:41 PM
তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদী। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে শপথগ্রহণ করেন তিনি। প্রথা মেনে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহেরুর পর মোদীই প্রথম যিনি প্রধানমন্ত্রিত্বের দুই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে তৃতীয়বার এ পদে আসীন হলেন।
শপথবাক্য পাঠ করে দেশ চালানোর গুরুদায়িত্ব আবার কাঁধে নিলেন তিনি। মোদীর পরই শপথ নিয়েছেন রাজনাথ সিং ও অমিত শাহ। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যও একে একে শপথ গ্রহণ করেছেন।
মোদীর নতুন জোট সরকারে থাকছেন ৭২ জন মন্ত্রী। মোদীর সঙ্গে তারা সবাই শপথ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৩০ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী আছেন।
অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা। কেবল বিদেশিই নয়, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদেরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয় মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে। তবে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি অনুষ্ঠানে যাননি। ওদিকে, চলচ্চিত্র তারকারা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন।
শপথের আগে সকাল সকাল মোদীকে গিয়েছিলেন রাজঘাটে। মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধের সামনে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সৌধ ‘সদৈব অটল’-এর কাছেও গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন তিনি।
মোদীর শপথগ্রহণের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সাজ সাজ রব ছিল দিল্লিতে। কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয় রাজধানী। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা নেয় দিল্লি পুলিশ। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কারণে দিল্লির আকাশসীমাতেও রোববার কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ২৯২টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এনডিএ সরকার গড়লেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ফলে তারা চাপে রয়েছে।
সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপি’কে শরিক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এনডিএ শরিকরা মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি শপথ নিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর মোদী বলেছিলেন, “আজ সকালে এনডিএ জোটের সব শরিক আমাকে নেতা হিসাবে বেছে নিয়েছে এবং রাষ্ট্রপতিকে তা জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতি এরপর আমাকে ডেকেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তারপরই আমি সন্ধ্যায় শপথগ্রহণের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি।”
এনডিএ-কে জয়যুক্ত করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদী বলেন, “এনডিএ-কে তৃতীয়বারের মতো দেশের সেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই… আমি এও বলতে চাই, গত দুই মেয়াদে দেশ যে গতিতে উন্নতি করেছে এবারও আমরা একই গতিতে একই দিশায় কাজ করে যাব।”
মোদী ৩.০ অনেকটাই আলাদা হচ্ছে তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল এনডিএ’র বৈঠকে। মোদী বলেছিলেন, 'আমি নয় আমরা' নীতিতে চলবে নতুন সরকার।
তবে মোদীর নতুন মেয়াদ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষ করে বিতর্কিত নানা রাজনৈতিক ও নীতিমালার বিষয়ে ঐকমত্য গড়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বিভিন্ন দলের স্বার্থ এং শক্তিশালী বিরোধীদলের মুখে মোদীকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট, প্রায় এক দশক ধরে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসলেও এবার বিরোধী ইন্ডিয়া জোট নির্বাচনে বিস্ময়করভাবে একটি শক্তিশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ফলে পার্লামেন্টে সরকারের যে কোনও একপাক্ষিক বা একমুখী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার সুযোগ পাবে কংগ্রেস পার্টি ও এর মিত্ররা।