“সীমান্ত আমাদের ওপর নির্ভর করে না। সিউলের দিকে তাকান- উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে থেকেও তারা বেঁচে আছে এবং তাদের জীবনটা সমৃদ্ধ।”
Published : 15 Feb 2025, 12:00 AM
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলে নিপ্রো নদীর তীরে বসবাস করেন ওলেকজান্দার বেজান, যিনি জীবন নিয়ে আর কোনো স্বপ্ন দেখেন না।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার আর মোটেও কোনো পরিকল্পনা নেই। সকালে চোখ খুলে যখন বুঝতে পারি বেঁচে আছি, সেটাই অনেক বড় কিছু মনে হয়।”
মালোক্যাটেরিনিভকা এলাকাটি ইউক্রেইনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের ফ্রন্ট লাইন থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল) উত্তরে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যদি যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় সফল হন, তাহলে মালোক্যাটেরিনিভকা এলাকাটি পড়বে ফ্রন্ট লাইনের ডান পাশে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই এলাকায় ২০২৩ সালে ইউক্রেনের সেনারা ব্যাপকভাবে পাল্টা হামলা শুরু করে।
ওই সময় ইউক্রেনের মানুষ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। তখন অবশ্য তারা কিইভের লড়াইয়ে তারা জয়ী হয়েছিল এবং আরও অনেক অঞ্চলে মুক্ত করেছিল।
কিন্তু ১৮ মাস পরে এসে দেখা গেল, জাপোরিঝিয়ার লড়াই সফল হয়নি; সেখানে রাশিয়ার আধিপত্যই রয়ে গেছে।
জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের ফ্রন্ট লাইনের অবস্থান বদলায়নি বললেই চলে, কিন্তু নিপ্রো নদীর অনেকটাই রাশিয়ার কব্জায় চলে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়টি ট্রাম্প যতটা সহজ ভাবছেন, ততটা সহজ ভাবছেন না ওলেকজান্দার।
তিনি বলেন, “এখন যেটা ফ্রন্ট লাইন, সেটা যদি সীমান্ত হয়ে যায়, তাহলে তা ভীতিকর একটা ব্যাপার হবে; যে কোনো সময় লড়াই শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।”
ইউক্রেইন ও যুক্তরাষ্ট্র- দুই দেশই শান্তি চায়। কিন্তু শান্তি কীভাবে আসবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ প্রকট।
যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা বলছে, রাশিয়া এরই মধ্যে যতটুকু এলাকা দখল করে নিয়েছে, ততটুকু তারা ছেড়ে দেবে না। কিন্তু ইউক্রেইন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে এমন একটা নিশ্চয়তা চায়, যেখানে রাশিয়া নিপ্রো নদী ধরে আর এগোবে না।
কিন্তু বাস্তবতা হল, ট্রাম্পের মনোযোগ রাশিয়ার দিকেই বেশি এবং তিনি ইউক্রেইনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিপক্ষে।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর ট্রাম্পের এমন অবস্থান ইউক্রেইনের মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তারা বিষয়টিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবেও দেখছেন।
সমালোচকদের কেউ কেউ ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন, কেউ কেউ সমালোচনা করছেন নতুন মার্কিন নীতির।
ওলেকজান্দার বলেন, “সীমান্ত আমাদের ওপর নির্ভর করে না। আর সীমান্ত সম্ভবত কাজে দেবে না। কিন্তু সিউলের দিকে তাকান- উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে থেকেও তারা বেঁচে আছে এবং তাদের জীবনটা সমৃদ্ধ।”
মালোক্যাটেরিনিভকার ভবিষৎ খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ ইউক্রেইনের ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনীতিকরা যখন আলোচনার কথা বলছেন, তখন ইউক্রেইনের মানুষ সেখানে লড়ে যাচ্ছেন আর জীবন দিচ্ছেন।
সেখানকার একটি গ্রামে লোকজন একবার এক সেনার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার উদ্দেশে জড়ো হয়েছিলেন। ওই সেনার নামও ওলেকজান্দার।
যে সমাধিক্ষেত্রে এই আয়োজন চলছিল, তার অর্ধেক কবর ছিল একেবারে নতুন। রাশিয়ার হামলার ভয়ে অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার ওই অনুষ্ঠান সেদিন ২৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি।
ওলেকজান্দারের স্ত্রী নাটালায়া বলেন, “শান্তিচুক্তির আশা আমার নেই। তারা আমাদের একের পর এক সন্তানকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে।”
নিপ্রো নদী ঘেঁষেই একটা রেলপথ চলে গেছে, যুদ্ধের কারণে সেটা দিয়ে এখন আর ট্রেন চলে না। রেলপথটি কাঁটাতারে ঘেরা। এই পথে দক্ষিণে ক্রাইমিয়া পর্যন্ত যাওয়া যেত।
৬৫ বছর বয়সী লাইয়ুদমাইলা ভলিক বলেন, রাশিয়া যেন কোনো নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য রেলপথটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
“আমাদের আশা, একদিন রেলপথটি আবার চালু হবে এবং আমরা আবার আমাদের ক্রাইমিয়ায় যেতে পারব।”