Published : 30 Apr 2025, 09:39 PM
ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের আগ্রাসী নীতি নেওয়ার মধ্যে এ বছর প্রথম তিনমাসেই অর্থনীতি ০ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
যদিও ট্রাম্পের দাবি ছিল, তার এ শুল্কনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যুরো অব ইকোনোমিক অ্যানালাইসিস’ এর পরিসংখ্যান বলছে, দেশের জিডিপি গতবছরের তুলনায় কমে ০ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গতবছর প্রথম তিনমাসে জিডিপি ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
এবছরের প্রথম প্রান্তিকে ট্রাম্প কেবল শুল্কআরোপের হুমকিই দেননি বরং মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ, এপ্রিলের শুরুর দিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু-মিত্র সব দেশের আমদানি পণ্যে নতুন শুল্কারোপ করেছেন। আর চীনের পণ্য রপ্তানিতে তিনি আরও বেশি শুল্ক চাপিয়েছেন।
পরে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ট্রাম্প নতুন শুল্ক আপাতত স্থগিত করলেও চীনকে রেহাই দেননি। বিশ্বের সব দেশের পণ্যে ট্রাম্প সার্বজনীনভাবে ১০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। কিন্তু চীনের পণ্যে চাপিয়েছেন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক।
ট্রাম্প এই শুল্কআরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছিল। পরে ট্রাম্প বেশিরভাগ দেশে উচ্চহারের শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন।
এই সময়সীমার পর ট্রাম্পের শুল্ক আবার কার্যকর হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী ফার্মগুলো প্রচুর আমদানি পণ্য মজুদ করতে শুরু করেছে। এ বছরের প্রথম তিনমাসে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি বেড়েছে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের জিডিপি তে।
ভোক্তা ব্যয় বেড়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে। গত তিন বছরের মধ্যে এবছরই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আগে থেকেই জিডিপি কমতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন।
তবে তারা যতটা আশঙ্কা করেছিলেন বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি খারাপ হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরেই এই অধ:পতন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ।
বিবিসি জানায়, ডেমোক্র্যাটিক এক কংগ্রেস সদস্য অর্থনীতির এই সংকোচনের জন্য এরই মধ্যে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করছেন স্যোশাল মিডিয়ায়। তবে ট্রাম্প বলছেন, এই জিডিপি কমার সঙ্গে তার শুল্কনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনি উল্টো এর জন্য দোষারোপ করেছেন তার পূর্বসূরি জো বাইডেনকে। ট্রুথ স্যোশালে ট্রাম্প লিখেছেন, “এটি ট্রাম্পের নয়, বাইডেনের স্টক মার্কেট। আমি ২০ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত দায়িত্ব নেইনি।
“শুল্ক শিগগিরই কার্যকর হতে চলেছে। আর কোম্পানিগুলোও রেকর্ড সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে সচল হতে শুরু করছে। আমাদের অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। কিন্তু আমাদেরকে বাইডেন আমলের ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হবে। এতে কিছুটা সময় লাগবে।
শুল্ক আরোপের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। কেবল তারা আমাদেরকে একটি বাজে পরিসংখ্যানের মধ্যে রেখে গেছে। অবস্থা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলে এটা অন্যরকম কিছু হবে। ধৈর্য্য ধরুন।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের প্রভাব বুঝতে হয়ত আরও কিছুটা সময় লাগবে। কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ মনে করছেন জিডিপি নিম্নমুখী হয়ত একবারের জন্যই হয়েছে। আবার হয়ত এমন নাও হতে পারে।
উত্তর আমেরিকার অর্থনীতিবিদ পল আসোয়ার্থ বলেন, এবছর প্রথম তিনমাসে আমদানি অনেক বেড়ে গেলেও আবার তা কমে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন তিনি।
তার মতে,আমদানি আরও কমে আসতে থাকলে আগামী কয়েকমাসে অর্থনীতিতে হয়ত আবার চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে।