কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের গোমা শহরে রোববার রাতে ঢুকে পড়া রুয়ান্ডাপন্থি এম২৩ বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী।
Published : 28 Jan 2025, 06:05 PM
মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) পূর্বাঞ্চলের গোমা শহরে ঢুকে পড়া রুয়ান্ডাপন্থি এম২৩ বিদ্রোহী বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টায় লড়াই শুরু করেছে কঙ্গো সামরিক বাহিনী।
এতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন নিহত এবং প্রায় ৩৭০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে হাসপাতাল সূত্রে। রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী-সমর্থিত এম২৩ বাহিনী এবং কঙ্গোর সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান এ লড়াই শহরটিকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
রুয়ান্ডার সীমান্তে পাঁচ বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর কঙ্গোর খনিজ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের প্রধান শহর গোমায় আবারও কামানের গোলা ও গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
রোববার রাতে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও রুয়ান্ডার সেনারা শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশের পর গোমার কতটা অংশ কঙ্গোলিজ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসছে। শহরের বাসিন্দা লুসি জানান, “আমরা আতঙ্কিত। বাড়ির বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি, আমরা বের হতে পারছি না।”
অনেক বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ২০২১ সালের শেষ দিকে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং উত্তর কিভু প্রদেশের বিশাল এলাকা দখল করতে শুরু করে।
কিন্তু তিন দশক ধরে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে চলমান অভ্যন্তরীন ও আন্তঃসীমান্ত সহিংসতার সর্বশেষ অধ্যায়ে এসে এ বছরের শুরু থেকে কঙ্গোর সামরিক বাহিনীর সঙ্গে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
এদিকে, গোমা শহরের প্রায় ১০ লাখ মানুষ ছাড়াও, লড়াইয়ের কারণে শহরের আশেপাশে আরও অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সোমবার হাসপাতালগুলোতে আহত ৩৬৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ওদিকে, মৃতের সংখ্যা অন্তত ১৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
রেড ক্রস কমিটির প্রধান মরিয়ম ফাভিয়ার জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য তাদের টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। আহতের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, এ সংঘর্ষের কারণে মানবিক সংকট আরও বাড়ছে, প্রায় ৫ লাখ মানুষ এ মাসে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই সংঘর্ষ আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে যেতে পারে বলে সতর্ক করছে জাতিসংঘ।
ডিআরসি সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুইয়া এক্সকে বলেন, “গোমায় এই লড়াই নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।”
জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিবেশী রুয়ান্ডা-সমর্থিত এই এম২৩ বিদ্রোহীরা চলতি মাসে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের গোলযোগপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে একের পর এক জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। কয়েকদিন আগেই তারা নর্থ কিভুর রাজধানী গোমাতে হামলা শুরু করে।
রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই এম২৩ যোদ্ধারা শহরের কেন্দ্র থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দূরে প্রান্তস্থিত মুনিগিও পেরিয়ে যায় বলে তিনটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে।
“গোমা এখন আমাদের হাতে,” বলেছেন বিদ্রোহী জোট কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সের কর্নেই নাঙ্গা। এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ডিআরসি ও রুয়ান্ডার মধ্যে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে রুয়ান্ডার পৃষ্ঠপোষকতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। কিগালি (রুয়ান্ডার রাজধানী) অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছে, তারা আর এম২৩-কে সহায়তা দিচ্ছে না।
জাতিসংঘে রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূত এর্নেস্ট রোয়ামুচিও বলেছেন, তার দেশ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ক্রমশ খারাপ হওয়া পরিস্থিতির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতির জন্য গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকারই মূলত দায়ী, বলেছেন তিনি।
“দেশটির সরকার যদি শান্তির বিষয়ে তাদের সত্যিকারের অঙ্গীকার দেখাতে পারত, তাহলে হয়ত এখনকার এই সংকট এড়ানো যেত,” বলেছেন রোয়ামুচিও।