সুইডিশ গণমাধ্যম সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে, তবে পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
Published : 06 Feb 2025, 02:17 PM
সুইডেনে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে ভয়াবহ ম্যাস শুটিংয়ে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনাকে দেশের ইতিহাসের অন্যতম ‘অন্ধকার দিন’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
হামলার পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। সুইডিশ গণমাধ্যম সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে, তবে পুলিশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এদিকে শোকে স্তব্ধ ওরেব্রোতে ঘটনার একদিন পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ওরেব্রো স্কুলে সহপাঠীদের জীবন বাঁচাতে তাদের চেষ্টার কথাও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে তুলে ধরেছেন।
মঙ্গলবার স্টকহোমের ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ওরেব্রো শহরে প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষা কেন্দ্র রিসবার্গস্কা স্কুলে এ বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহতদের স্মরণে বুধবার ওরেব্রো শহর, সুইডিশ পার্লামেন্ট ও স্টকহোমের রাজপ্রাসাদে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ ও রানি সিলভিয়া। ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন তারা।
নিহতদের স্মরণে স্কুলের পাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে, সাদা ফুল রেখে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর সুইডিশ রাজা সাংবাদিকদের বলেন, "এই শোক একা বহন করা কঠিন।আমি মনে করি, সুইডেনের সবাই এই মর্মান্তিক ঘটনার যন্ত্রণা অনুভব করছে।"
দেশটির প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসন তার বিবৃতিতে বলেন, “৪ ফেব্রুয়ারি সুইডেনের ইতিহাসে চিরদিনের জন্য একটি অন্ধকার দিন হয়ে থাকবে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সবাই শোকাহত। এখন আমাদের একত্রিত হতে হবে। আহতদের এবং নিহতদের স্বজনদের এই শোকের ভার একসঙ্গে বহন করতে হবে।”
সুইডিশ পুলিশ জানিয়েছে তারা তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। হামলাকারী একাই এ ঘটনায় জড়িত বলেও মনে করছে তারা।
সন্দেহভাজন হামলাকারী নব্য-নাৎসি কিংবা জিহাদি মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারে এমন গুজবের সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও দাবি তাদের।
সুইডিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এ হামলাকারীর নাম রিকার্ড এন্ডারসন। ৩৫ বছর বয়সী বেকার এই ব্যক্তি একাই থাকতেন।
পুলিশের একটি সূত্র হামলাকারীর নাম এন্ডারসন বললেও বাহিনীটির মুখপাত্র এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
“কী উদ্দেশ্যে এই হামলা তা বের করার চেষ্টা করছি আমরা,” বলেছেন স্থানীয় পুলিশপ্রধান রবার্টো ইদ ফরেস্ট।
ঘটনায় আহতদের মধ্যে আহত ছয়জনের চারজনই নারী। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, বলেছে আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মঙ্গলবার হামলার সময় বন্দুকধারী যখন গুলি চালাতে শুরু করে তখন কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিল, অন্যরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিল।
"আমার পাশের একজনের কাঁধে গুলি লাগে। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পেছনে তাকিয়ে দেখি তিনজন রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। সবাই হতবাক হয়ে গেল। হট্টগোল শুরু হলো। সবাই বলছিল, বের হও, বেরিয়ে যাও,” মারওয়া নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী টিভি ফোরকে তার এ দুঃসহ স্মৃতি ব্যক্ত করেন।
স্কুলটির শিক্ষক ৫৪ বছর বয়সী মারিয়া পেগাদো বলেন, দুপুরের খাবার বিরতির পরপরই কেউ তার শ্রেণিকক্ষের দরজা খুলে দেয় এবং চিৎকার করে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বলে। এরপর তিনি ও তার শিক্ষার্থীরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে চলে যান।
“আমি আমার শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছি। তাদের অনেকেই এমন দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে, যেখানে এমন ভয়াবহ ঘটনার সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এখন তারা সুইডেনে এসেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। এটা সত্যিই ভয়ঙ্কর," বলেছে তারা।
ওরেব্রোর মেয়র জন জোহানসন সম্প্রচারমাধ্যম এসভিটিকে বলেন, “এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে, এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। আমি বুঝতে পারছি, আমাদের সন্তানরা ভীত। আমিও ভয় পাচ্ছি।”
সুইডেনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্দুক সহিংসতা ও বোমা হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এর পেছনে সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীগুলো রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে দেশটিতে স্কুলে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা বেশ বিরল।