যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, নাইজারের অভ্যুত্থানে রাশিয়া বা দেশটির বেসরকারি বাহিনী ওয়াগার গ্রুপের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি তারা।
Published : 28 Jul 2023, 01:31 PM
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আটকে রাখা হয়েছে, তারপর থেকে কে এখন দেশটির দায়িত্বে আছেন তা পরিষ্কার হয়নি। বিভিন্ন দেশ ও পক্ষ এই অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সেনারা অভ্যুত্থান ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট বাজোমকে বন্দি করে।
দেশটির সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স এবং পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক ব্লক ইসিওডব্লিউএএস অবিলম্বে বাজোমকে মুক্তি দিয়ে দেশটিতে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন; জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, নাইজার সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা ‘গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের প্রতি তাদের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির’ ওপর নির্ভরশীল ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ মিশনের এক মুখপাত্র বলেছেন, নাইজারের সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ নেওয়াকে সমর্থন করবে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান মুসা ফকি মহম্মদ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট বাজোমের সঙ্গে কথা বলেছেন আর ‘তিনি খুব ভালো’ আছেন বলে জানিয়েছে মুসা; এমনটি জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ।
বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা এক পোস্টে বাজোম ‘কষ্ট করে অর্জন করা’ গণতান্ত্রিক সুফল রক্ষা করার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনো পোস্ট বা মন্তব্য করেননি তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান যোসেপ বোরেইলসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতা বাজোমের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
অভ্যুত্থানের পর থেকে এখনও নাইজারের নতুন কোনো নেতার নাম ঘোষণা করা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সেনা সদস্যদের শুরু করা এ অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী সমর্থন জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্টের সেনাদের সশস্ত্র বাহিনী থেকেই নিয়ে আসা হয় আর তাদের প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা। জেনারেল ওমর চিয়ানি নাইজারের প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের বর্তমান প্রধান।
কিন্তু বুধবার রাতে যে সেনা কর্মকর্তারা বাজোমকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা টেলিভিশনে ঘোষণা করেন তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন না।
এদিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এসে কর্নেল আমাদু আবদ্রামানে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তারা নাইজারের সংবিধান বিলুপ্ত ঘোষণা করছেন। সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাতিল এবং দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও দেন।
এই ঘোষণা দেওয়ার সময় সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা আরো নয়জন সেনাকর্মকর্তা আবদ্রামানেকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন।
নাইজারের এ ঘটনা ২০২০ সাল থেকে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় হওয়া সপ্তম অভ্যুত্থান। এটি এ অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অগ্রগতি ও জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পশ্চিম আফ্রিকায় জঙ্গি দমন অভিযানে পশ্চিমাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের অন্যতম নাইজার।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নাইজারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা এলিটরা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে তা নিয়ে এখনও বিতর্করত আছেন।
সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন জানানোর পর বৃহস্পতিবার রাজধানী নিয়ামেইতে ক্ষমতাসীন দলের সদরদপ্তরগুলোতে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয় অভ্যুত্থানের সমর্থকরা। এর আগে এই সমর্থকরা দেশটির জাতীয় পরিষদের সামনে জড়ো হয়ে রাশিয়ার পতাকা দুলিয়েছিল এবং ফ্রান্সবিরোধী শ্লোগান দিয়েছিল।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের প্রভাব নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২০ ও ২০২২ সালে যথাক্রমে মালি ও বুরকিনা ফাসোর ক্ষমতা গ্রহণকারী জান্তা ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মিত্রতা ছিন্ন করে রশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে। নাইজার ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, নাইজারের অভ্যুত্থানে রাশিয়া বা দেশটির বেসরকারি বাহিনী ওয়াগার গ্রুপের জড়িত থাকার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি তারা।
নাইজারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে প্রকাশিত বিবৃতিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলা ও ভাংচুরের নিন্দা করে এবং পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে।
দেশটির সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ এক বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেও সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশে অস্থিতিশীলতা এড়ানো এবং প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।
নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট বন্দি
নাইজারে প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের পর ক্ষমতাসীন দলের দপ্তরে হামলা