পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে লিজ ট্রাস জানিয়েছেন, কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
Published : 20 Oct 2022, 09:55 PM
দায়িত্ব নেওয়ার ৪৫ দিনের মাথায় নাটকীয়ভাবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের পদত্যাগের ঘোষণার পর এখন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী কে হতে চলেছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
পার্টি যাকে নেতা নির্বাচন করবে তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। লিজ ট্রাস জানিয়েছেন, টোরি (কনজারভেটিভ) দলের নেতা নির্বাচন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
তেমন হলে নির্বাচনী ফল ঘোষণা আগামী সপ্তাহের শুক্রবারেই হতে পারে বলে আশা করছেন ১৯২২ কমিটি চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্র্যাডি।
বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কির স্টারমারসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ট্রাসের পদত্যাগে অবিলম্বে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে।
কিন্তু ট্রাস বলছেন, একজন উত্তরসূরি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতৃত্ব নেওয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকবেন।
টোরি নেতা নির্বাচনে লড়ার জন্য সবার কাছে পছন্দনীয় এমন কোনও সুস্পষ্ট প্রার্থী এখনও নেই। তবে বুকমেকারদের পছন্দের তালিকায় আছেন- ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট এবং বেন ওয়ালেস।
গতবারের টোরি নেতা নির্বাচনে সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক ছিলেন লিজ ট্রাসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাকে হারিয়েই ট্রাস কনজারভেটিভ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
অন্যদিকে, তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট পঞ্চম দফা ভোটেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস গতবারের টোরি নেতা নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
ঋষি সুনাক এবং পেনি মর্ডান্টকে এবারও প্রার্থী হিসাবে দেখা হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট এবার প্রতিদ্বন্দ্বিায় না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতবার দলীয় নির্বাচনী দৌড়ে নেমে তিনি প্রথম দফা ভোটেই বাদ পড়ে গিয়েছিলেন।
ওদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবার আবার প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু তার আবার ফিরে আসাটা টোরি এমপিদের জন্য ‘খুবই উদ্বেগজনক’ হতে পারে বলেই মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন কার্টিস।
কারণ, তিনি বলেন, বরিস জনসনের বিরুদ্ধে এখনও পার্লামেন্টারি কমিটির তদন্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জনসন ডাউনিং স্ট্রিটে পদপানের পার্টি করা নিয়ে হাউজ অব কমন্সকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখতেই চলছে এ তদন্ত।
তাই তার প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে সামিল হওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে বলেই মনে করেন কার্টিস। তার মতে বরং ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট, সুয়েলা ব্রাভারম্যানই যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য বেশি সঠিক এবং সম্ভাবনাময় প্রার্থী।
বিবিসি’র এক রাজনৈতিক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, গতবারের টোরি নেতা নির্বাচনে যারা ঋষি সুনাককে সমর্থন করেছিলেন তারা এবার আবারও ঋষিকেই সমর্থন দিতে একাট্টা হয়েছেন।
ঋষি সুনাক অবশ্য এখনও এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। তবে বেশ কয়েকটি খবরে শোনা যাচ্ছে তিনি নির্বাচনী দৌড়ে নামতে প্রস্তুত আছেন। পেনি মর্ডান্টও খুব সম্ভবত প্রার্থী হচ্ছেন। যদিও তিনি এখনও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি।
অন্যান্যদের মধ্যে বেন ওয়ালেস ছাড়াও নাম শোনা যাচ্ছে বাণিজ্যমন্ত্রী কেমি বদেনখ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি এবং সদ্যই পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যানের।
এই চারজনের কেউই এখনও প্রার্থিতার ব্যাপারে মুখ খোলেননি। কিন্তু বদেনখ এবং ব্রাভারম্যানের মিত্ররা জানিয়েছে, তারা নেতৃত্বের দৌড়ে নামতে ইচ্ছুক। আর গতবারের টোরি নির্বাচনে লড়া মাইকেল গভ এবং টম টুগেনধাত এবার আর লড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে সোমবার বিকালের মধ্যেই ১০০ জন এমপি’র সমর্থন পেতে হবে।সম্ভাবনাময় প্রার্থীদেরকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে এরই মধ্যে টোরি এমপিদের মধ্যে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকজন এমপি প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা বরিস জনসন, ঋষি সুনাক এবং পেনি মর্ডান্টকে সমর্থন দেবেন।
আবার কয়েকজন এমপি সুয়েলা ব্রাভারম্যান এবং কেমি বদেনখকে সমর্থন করতে আগ্রহী। অন্যদিকে, লিজ ট্রাসকে পছন্দ করেন না এমন এমপি’দের কেউ কেউ কাকে সমর্থন দেবেন সে ব্যাপারে এখনও মনস্থির করতে পারেননি।