রাজধানী দামেস্কের বাইরে মুয়াদামিয়াত আল-শাম কম্পাউন্ডে চলছে এই জবরদখল।
Published : 31 Dec 2024, 10:21 PM
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আমলে ভতুর্কি দেওয়া বাড়িগুলোতে বাস করা সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারকে উচ্ছেদ করে সেগুলো এখন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে সদ্যই ঝড়ো অভিযানে জয়ী হওয়া সাবেক বিদ্রোহী যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে।
স্থানীয় অধিবাসী ও যোদ্ধারা একথা জানিয়েছে। রাজধানী দামেস্কের বাইরে মুয়াদামিয়াত আল-শাম কম্পাউন্ডে চলছে এই জবরদখল। আসাদের শাসনামলে সামরিক কর্মকর্তাদের আবাসনের বেশ কয়েকটি এলাকার মধ্যে এই কম্পাউন্ড ছিল একটি। সেখানে এক ডজনেরও বেশি ভবনে শত শত মানুষের বাস।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে আসাদ আমলের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের একসময়কার নিরাপদ আবাসন এখন হস্তান্তর করা হচ্ছে বিরোধী বাহিনীর যোদ্ধাদের, যারা বছরের পর বছর ধরে গরিব, পল্লী, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ছিল।
আসাদের শাসনের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন সরকার ঢেলে সাজানো হচ্ছে, সাবেক বিদ্রোহী যোদ্ধাদেরকে সামিল করা হচ্ছে সামরিক বাহিনীতে। এতে এক সময়কার প্রতাপশালী আসাদ অনুগতরা বাস্তুচ্যুত হওয়ার মুখে পড়েছে।
আর গত ৮ ডিসেম্বরে রাজধানী দামেস্ক দখল করা বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস)-এর যোদ্ধারা এরই মধ্যে আসাদ আমলের সামরিক কর্মকর্তাদের খালি হওয়া বাড়িগুলোতে উঠে গেছে। এ থেকে সিরিয়ায় হঠাৎ ক্ষমতার গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের বিষয়টিই সামনে আসছে।
আসাদ সমর্থকদের বাড়িঘর এখন চলে যাচ্ছে সাবেক বিদ্রোহীদের দখলে। হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অধীন বিদ্রোহী দলগুলোর নাম ভবনের প্রবেশপথে স্প্রে পেইন্টে লেখা হয়েছে।
তিন যোদ্ধা, ওই কম্পাউন্ডে বসবাসকারী চার নারী এবং কাগজপত্রের কাজে সহায়তাকারী এক স্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারকে জায়গাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য মাত্র পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়।
"আমাদের বাচ্চাদের স্কুল বদলাতে হবে, আমাদের জীবন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। আমার খুব মন খারাপ, কষ্ট হচ্ছে," বলেছেন মুয়াদামিয়াত আল-শামে বাস করা সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার স্ত্রী ৩৮ বছর বয়সী বুদুর মাকদিদ।
মাকদিদ আরও জানান, তার স্বামী নতুন কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেওয়ার কাগজপত্রে সই করেছেন। তিনি তার অস্ত্রও জমা দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে আসাদের প্রাক্তন শক্ত ঘাঁটি লাতাকিয়া প্রদেশে তার পরিবারের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। মাকদিদ এবং তাদের সন্তানরা সেখানে তার সঙ্গে যেয়ে উঠবেন।
এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া অন্যান্য পরিবারের মতো, বুদুর মাকদিদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি নথির প্রয়োজন ছিল যা আনুষ্ঠানিকভাবে তার পরিবারের চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবং তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়।
৬৯ বছর বয়সী স্থানীয় প্রশাসক খলিল আল-আহমেদ জানান, বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই পরিবারগুলো তার কাছে এই নথির জন্য আসতে শুরু করেছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি অনুরোধ করা হয়েছে।
আহমেদ আরও উল্লেখ করেছেন, নতুন প্রশাসন তাকে উচ্ছেদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেনি। তিনি তখনই জেনেছেন যখন বাসিন্দারা তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইতে শুরু করে।
হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
এ মাসের শুরুর দিকে এইচটিএস নেতা আহমেদ আল-শারাকে দামেস্কে তার পরিবারের সাবেক বাড়ির বাসিন্দাদের চলে যেতে এবং তার নিজের পরিবারকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করে ভিডিও করা হয়।
এইচটিএস যোদ্ধারা বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোর প্রতি সামান্যই সহানুভূতি দেখিয়েছে। একজন যোদ্ধার মন্তব্য, “আমরাও বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম, চাঁদহীন রাতে কেবল আমরা যে পোশাক পরেছিলাম তা নিয়ে চলে যেতে হয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ তারা তো তবুও তাদের জিনিসপত্র বের করার অনুমতি পেয়েছে।”