মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কাছের মিত্র ইসরায়েলের প্রতিদ্ব্ন্দ্বী ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, পশ্চিমাদের মধ্যে এমন আশঙ্কা বিদ্যমান।
Published : 08 Mar 2025, 10:39 AM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী এবং এ মনোভাব ব্যক্ত করে এরই মধ্যে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্রটির নেতাদের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কাছের মিত্র ইসরায়েলের প্রতিদ্ব্ন্দ্বী ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, পশ্চিমাদের মধ্যে এমন আশঙ্কা বিদ্যমান। তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ চিঠি পাঠাল।
“আমার ধারণা আপনারা আলোচনা করবেন, কারণ এটা ইরানের জন্য অনেক ভালো হবে,” ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইরানের নেতাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সাক্ষাৎকার শুক্রবার প্রচারিত হয়েছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইরান এখনও ট্রাম্পের চিঠি পায়নি, শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের ইরান মিশন।
তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প শুক্রবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইরান ইস্যুতে খুব দ্রুতই কিছু না কিছু হবে বলে আশা করছেন।
“আমরা চূড়ান্ত মুহূর্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এটা খুবই চিত্তাকর্ষক সময় হতে যাচ্ছে। দেখা যাক কী হয়। কিন্তু আমরা চূড়ান্ত মুহূর্তের দিকে যাচ্ছি। চূড়ান্ত মুহূর্ত। তাদেরকে পারমাণবিক অস্ত্রধর হতে দিতে পারি না।
“ইরানের সঙ্গে এখন আমাদের এমন এক পরিস্থিতি, তাতে খুব শিগগিরই কিছু একটা হতে যাচ্ছে। একটা শান্তি চুক্তি করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। আপনারা জানেন, আমি শক্তি বা দুর্বলতার কথা বলছি না। আমি কেবল বলছি, অন্য কিছুর চেয়ে আমি বরং একটি শান্তি চুক্তি দেখতে চাই, কিন্তু অন্যভাবেও সমস্যার সমাধান হতে পারে,” ওভাল অফিসে বলেন ট্রাম্প।
ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট নুর নিউজ ট্রাম্পের চিঠিকে ‘নাটকের পুনরাবৃত্ত প্রদর্শনী’ অ্যাখ্যা দিয়েছে।
ফক্স বিজনেসের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি চিঠিটি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে পাঠিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “হ্যাঁ।”
“ইরানকে মোকাবেলা করার দুটি উপায় আছে- সামরিকভাবে, বা আপনি একটি চুক্তি করতে পারেন। আমি চুক্তি করাই পছন্দ করবো, কারণ আমি ইরানকে আঘাত করতে চাই না। তারা চমৎকার মানুষ,” বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি ‘গতকাল’ চিঠিটি পাঠিয়েছেন, যার অর্থ দাঁড়ায় চিঠিটি বুধবার পাঠানো হয়েছে।
পশ্চিমা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, পারমাণবিক অস্ত্রধর ইরান ইসরায়েল ও উপসাগরের আরব তেল উৎপাদক দেশগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, অঞ্চলজুড়ে উসকে দিতে পারে নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
অন্যদিকে তেহরান বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে আগ্রহী নয় তারা, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একেবারেই শান্তিপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর ব্যাপক শক্তিক্ষয় ইরানকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছে, এর সুযোগ নিয়েই ট্রাম্প কূটনীতিকভাবে ইরানকে ঘায়েল করতে চান।
তবে ইরানের কর্মকর্তারা আঞ্চলিকভাবে প্রভাব হারানোর কথা স্বীকার করতে রাজি নন।
গত বছর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পাল্টায় ইসরায়েল শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় হামলা চালিয়ে তেহরানের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে বলে আন্দাজ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের।
ইরানের পরমাণু অস্ত্রধর হওয়া ঠেকাতে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় প্রভাবশালী দেশ ২০১৫ সালে জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে একটি চুক্তি করেছিল। পরের বছর প্রথমবার হোয়াইট হাউজে ঢোকেন ট্রাম্প। তার ওই মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে আসে।
এরপর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়াতে শুরু করে।
ট্রাম্পের চিঠি পাঠানো নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত আলোচনা সম্বন্ধে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল।
তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সম্ভব সব কিছু করার অঙ্গীকার রয়েছে ক্রেমলিনের, বলেছে ওই সূত্রটি।
শুক্রবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালির সঙ্গে বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়ে কথা হয়েছে।
এদিকে মস্কোর সঙ্গে তেহরানের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে গত বছর রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা ইরানে বারবার গেছেন বলে ভ্রমণ রেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করে বলছে রয়টার্স।