যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতি দিয়েও ইসরায়েল বেপরোয়া হামলা চালাচ্ছে গাজায়।
Published : 16 Jan 2025, 07:12 PM
গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতি এবং রোববার থেকে তা কার্যকর হওয়ার আশাবাদের মধ্যেই ভূখন্ডটিতে ব্যাপক ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি হয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার খবর আসার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় হামলা জোরদার করেছে। এসব হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় এই বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। আরও অনেকেই ধসে পড়া বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়েছে। এই হামলার আগে ইসরায়েল আরও ৮ টি হামলা চালায়।
সর্বশেষ নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা নিয়ে গাজায় যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬,৭৪৪ জনে। এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
ইসরায়েল এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। বুধবার কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির একটি চুক্তিতে সম্মতি জানায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েল দুই পক্ষই।
চুক্তিটি রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে ছয় সপ্তাহের পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতি করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করাসহ ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক হওয়া প্রায় ১০০ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে দেবে ফিলিস্তিন। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ওদিকে এর বিনিময়ে এক হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
তবে ইসরায়েল তাদের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এবং সরকারের ভোটে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত এ চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে পারবে না। এই ভোট হওয়ার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবারেই।
কিন্তু এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, হামাস শেষ মুহূর্তে নতুন দাবি তুলেছে। যতক্ষণ না মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চিত করছেন যে, হামাস চুক্তির সব শর্ত মেনে নিয়েছে, ততক্ষণ ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে না।
এই বিলম্বের কী প্রভাব যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পড়বে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে শেষ মুহূর্তের এই সংকট তৈরির অভিযোগ অবশ্য বৃহস্পতিবার অস্বীকার করেছেন এক হামাস কর্মকর্তা।
হামাসের উধ্র্বতন কর্মকর্তা ইজজাত আল-রিশক বলেন, “মধ্যস্থতাকারীরা বুধবার যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ঘোষণা করেছে, হামাস তাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ওদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারের কট্টরপন্থিরা চুক্তিটি এখনও ঠেকিয়ে দেওয়ার প্রত্যাশায় আছেন। যদিও মন্ত্রীদের বেশিরভাগই চুক্তিটি সমর্থন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার দল কেবল তখনই সরকারে থাকবে, যদি ইসরায়েল হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত পূর্ণ শক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালানো শুরু করে। ওদিকে, কট্টর ডান পুলিশ মন্ত্রী বেন গাভিরও হুমকি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি অনুমোদন পেলে তিনি সরকার ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন।