ইউক্রেইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আকস্মিক সফর রাশিয়ার অনেক যুদ্ধবাজ সামরিক পণ্ডিতকেই ক্ষিপ্ত করেছে, ফেলেছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
এই সফর এমনকী ধুঁকতে থাকা সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতিরত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপও বাড়িয়েছে।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার বড়সড় অভিযান শুরুর বছরপূর্তির দিনকয়েক আগে বাইডেনের এই ঐতিহাসিক সফর চলমান সংঘাতের সন্ধিক্ষণে কিইভকে একধরনের প্রতীকী প্রণোদনা দিল, বলছে সিএনএন।
তবে সফরটি একইসঙ্গে রাশিয়ার সামরিকপন্থি ও উগ্র জাতীয়তাবাদী মহলকে ক্রুদ্ধ করেছে, একইসঙ্গে তা মঙ্গলবারের ভাষণের আগেই সবার মনোযোগ নিয়ে গেছে পুতিনের দিকে। এদিনের ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ কথিত সফলতাগুলোই তুলে ধরবেন বলে অনেকে মনে করছেন।
“কিইভে গিয়ে বাইডেন রাশিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। অলৌকিক হাইপারসনিক অস্ত্রের গল্প সম্ভবত শিশুদের জন্য তুলে রাখা হয়েছে। যেমনটা তোলা আছে পবিত্র যুদ্ধের মন্ত্র, যেই যুদ্ধ আমাদের করতে হচ্ছে পুরো পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে।
“আমার মনে হয়, পবিত্র যুদ্ধে দুপুরের আহারের বিরতি চলছে,” তীর্যক ভাষায় নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এই মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাংবাদিক সের্গেই মারদান।
অভিজ্ঞ রুশ সেনা ও সাবেক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এফএসবি) কর্মকর্তা ইগর গিরকিন ক্ষোভজড়ানো ভাষায় লিখেছেন, বাইডেন চাইলে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রেও যেতে পারতেন, এবং সম্ভবত অক্ষতই ফিরতেন।
“দাদুকে (বাইডেনকে ইঙ্গিত করে এমনটাই লিখেছেন তিনি) যদি বাখমুতেও নিয়ে আসা হতো, তাও তাজ্জব হতাম না, তারপরও তার কিছুই হতো না,” ভাষ্য গিরকিনের।
রাশিয়ার যে কট্টরপন্থি সামরিক ব্লগারদের লাখ লাখ অনুসারী আছে এবং যাদের পর্যালোচনা রুশ জনগণের বড় অংশকে প্রভাবিত করে গিরকিন তাদের অন্যতম। এই সামরিক ব্লগাররা অবশ্য আগে থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে পুতিনের জেনারেলদের ‘নরম’ অবস্থানের ধারাবাহিক সমালোচনা করে আসছিলেন।
এর বাইরেও অনেকেই ইউক্রেইনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপদ ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন সফরকে ইউক্রেইনে রাশিয়ার ত্রুটিপূর্ণ অভিযানের আরেকটি প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
রুশ সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট জাপিস্কি মিচমানা পিচকিনা ব্যঙ্গভরে লিখেছে, কিইভে বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আগে পৌঁছে গেলেন।
“বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর প্রায় এক বছর হতে চলল, আমরা রুশ শহর কিইভে রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অপেক্ষায় নয়,” বলেছে তারা।
সক্রিয় যুদ্ধাঞ্চল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি নেই, এমন কোথাও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর নজিরবিহীনই বটে; সে কারণেই বাইডেনের এই সফরকে অভাবনীয় বলা হচ্ছে।
অবশ্য ‘সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে’ সফরের কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্র বাইডেনের যাত্রার বিষয়টি রাশিয়াকে অবহিত করেছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান।
সিএনএন এ প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তবে এখন পর্যন্ত তারা বাইডেনের সফর নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইউক্রেইন সফরের প্রভাবকে উড়িয়ে দিয়েছেন; ওয়াশিংটন ইউক্রেইনকে যুদ্ধে উৎসাহিত করে যাচ্ছে বলে অভিযোগও করেছেন তিনি।
“আগেভাগে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেয়ে বাইডেন অবশেষে কিইভ পৌঁছেছেন। অবশ্যই সেখানে জয় নিয়ে হাঁকডাক থাকবে, যার সঙ্গে থাকবে নতুন অস্ত্রশস্ত্র ও সাহসী লোকদের কথা।
“মনে রাখা দরকার, পশ্চিমারা নিয়মিতভাবেই কিইভে অস্ত্র আর অর্থ পাঠিয়ে যাচ্ছে। তাও বিপুল পরিমাণে। যা নেটো দেশগুলোর সমর-শিল্প খাতকে টাকা আয় এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির জন্য অস্ত্র চুরির সুযোগ করে দিচ্ছে,” টেলিগ্রামে এমনটাই বলেছেন মেদভেদেভ।
সাবেক এই রুশ প্রেসিডেন্ট এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধানের দায়িত্বে আছেন। জাতীয়তাবাদী হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে সম্প্রতি তাকে ব্যাপক যুদ্ধবাজ কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে।
বাইডেনের সফর ঘিরে এই বিতর্ক পুতিনের কাছে অবাঞ্ছিতই হওয়ার কথা। রুশ প্রেসিডেন্ট চলমান অভিযান নিয়ে মঙ্গলবার দেশের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন।
বিদেশি অতিথি ও প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও ভাষণের সময় সেখানে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ অংশ নেওয়া অনেকে উপস্থিত থাকবেন বলে সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু করা সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধে কিইভ ও ইউক্রেইনের মধ্যাঞ্চলে ব্যর্থ আক্রমণের এক বছরেরও বেশি সময় পর আসছে সপ্তাহগুলোতে পুতিন ইউক্রেইনে ফের বড়সড় আ্ক্রমণ চালাবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: