বাইডেনের ইউক্রেইন সফরের কথা যেভাবে গোপন রাখা হয়েছিল

ইউক্রেইনের রাজধানীতে বাইডেনের এ অপ্রত্যাশীত সফরকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বর্ণনা করছেন ‘আধুনিক সময়ে নজিরবিহীন’ ঘটনা হিসেবে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2023, 08:03 AM
Updated : 21 Feb 2023, 08:03 AM

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছর পূর্তির কয়েকদিন আগেই কিইভে আকস্মিক সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৷ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের এমন হটকারী সফরের কথা খুব একটা শোনা যায় না।

নিয়মিত হামলার মধ্যে যুদ্ধ চলছে এমন একটি অঞ্চলে হাজির হওয়া! তাই ইউক্রেইনের রাজধানীতে বাইডেনের এ অপ্রত্যাশীত সফরকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বর্ণনা করছেন ‘আধুনিক সময়ে নজিরবিহীন’ ঘটনা হিসেবে।

পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও যুদ্ধের মধ্যে ইরাক ও আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেসব সফর হয়েছিল ব্যাপক মার্কিন সেনা উপস্থিতির সুবিধা নিয়ে। এবারেরটা পুরোপুরিই অন্যরকম, বলছেন তারা।

বাইডেন হয়তো পোল্যান্ড সফরের সময়ই ইউক্রেইন যেতে পারেন, এমন একটা গুঞ্জনও ছিল প্রেসিডেন্টের সফর সঙ্গী প্রেস বহরের মধ্যে । কিন্তু তারপরও কিইভে তার সোমবারের সফর সবাইকে তাজ্জব বানিয়ে দিয়েছে বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

বিবিসি লিখেছে, বিমান হামলার সতর্ক সংকেতের মধ্যে কিইভের কেন্দ্রস্থলে প্রেসিডেন্ট ভলোমিদির জেলেনস্কির পাশে থেকে বাইডেন যে বার্তা দিলেন, তা পোল্যান্ডে দিতে যাওয়া বক্তৃতায় যা-ই বলেন না কেন তার চেয়েও জোরাল হল।

“এটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কারও মনে আর কোনো সন্দেহ থাকা উচিত হবে না যে, জো বাইডেন এমন একজন নেতা, যিনি অঙ্গীকারকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন,” বলেছেন হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর কেট বেডিংফিল্ড।

সাংবাদিকদের ফোন নিয়ে নেওয়া হয়

সময়সূচি অনুযায়ী বাইডেনের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুইদিনের সফরে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশর উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার কথা ছিল সোমবার সন্ধ্যার দিকে।

আগেভাগে দেওয়া এই ভ্রমণসূচিতে এক আয়োজন থেকে আরেক আয়োজনের মধ্যকার সময়ের মধ্যে বড় বড় দুটো বিরতি ছিল; এই বিরতিগুলোর কোনো একটিতে প্রেসিডেন্ট ইউক্রেইন থেকে ঘুরে আসতে পারেন বলে ভেবেছিলেন বেশিরভাগ সাংবাদিক।

প্রেসিডেন্টের আদৌ ইউক্রেইন সফরের ভাবনা আছে কিনা, তা বের করতে হোয়াইট হাউসের দৈনন্দিন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বারবার প্রশ্ন করেছিলেন তারা।

তার উত্তরে বলা হয়েছিল, ‘এখন পর্যন্ত’ জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক ও ওয়ারশ’র বাইরে অন্য কোথাও থামার কোনো পরিকল্পনা বা দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

কিইভ সফরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শুক্রবার, যদিও প্রেসিডেন্টের কয়েকজন শীর্ষ সহযোগী কয়েক মাস ধরেই এ নিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছিলেন।

রোববারও হোয়াইট হাউসের আনুষ্ঠানিক সফরসূচিতে দেখানো হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট ওয়ারশ-র উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন সোমবার, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে; অথচ এয়ারফোর্স ওয়ান রওনা হয় রোববার ভোর সোয়া ৪টার দিকেই।

ওই ফ্লাইটে প্রেসিডেন্টের সঙ্গী হয়েছিলেন অল্প কয়েক ঘনিষ্ঠ সহযোগী, একটি মেডিকেল দল ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

এই যাত্রায় কেবল দুই সাংবাদিক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন। তারা এই সফরের তথ্য গোপন রাখবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাদের মোবাইল ফোনও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট কিইভে নামার আগ পর্যন্ত এই সফরের খবর দেওয়ার অনুমতিও ছিল না তাদের।

জানানো হয় রাশিয়াকে

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান জানান, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হওয়ার কয়েকঘণ্টা আগে তার কিইভ নামার বিষয়টি রাশিয়াকে জানানো হয়েছিল।

“সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র এমনটা করেছে। তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে কিংবা আমাদের সুনির্দিষ্ট বার্তাটির ধরন কী ছিল, তা আমি বলতে পারবো না কিন্তু আমরা যে তাদেরকে নোটিস দিয়েছিলাম, তা আমি নিশ্চিত করতে পারি,” বলেছেন তিনি।

বার্তা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও

বাইডেন পোল্যান্ডে পৌঁছানোর পর ১০ ঘণ্টা ট্রেন ভ্রমণ করে কিইভে পৌঁছান। তিনি চাইলে ইউক্রেইনের ভেতর এমন অন্য কোনো জায়গা সফর করতে পারতেন, যেখানে যাওয়া তুলনামূলক সহজ হতো। কিন্তু তিনি কিইভে যাবেন বলেই মনস্থির করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ সফর ইউক্রেইনকে সহায়তায় বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি বিষয়ে মস্কোকে সংকেত দেওয়ার জন্য হলেও এর মাধ্যমে একই সঙ্গে মার্কিন ভোটারদের কাছেও একটি বার্তা গেল।

গত কিছুদিনের জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছিল, ইউক্রেইনের জন্য মার্কিনিদের সমর্থনের সুর নরম হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গত সপ্তাহেই বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জঁ-পিয়েরেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট যখন কথা বলেন, তখন তিনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে যেমন বলেন, তেমনি মার্কিন জনগণের উদ্দেশ্যেও বলেন।

সোমবার ইউক্রেইন সফরের মাধ্যমে তিনি যে বার্তাটি দিলেন, তা সাজানোই হয়েছিল রিপাবলিকান সংখ্যালঘু অংশের উদ্দেশ্যে, যারা ইউক্রেইনে যুক্তরাষ্ট্র আর কতদিন ধরে সাহায্য করে যাবে, সেই প্রশ্ন তুলছিল।

এদিকে সোমবার যে সাংবাদিকরা বাইডেনের সঙ্গে পোল্যান্ড যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর তাদেরকে অন্যভাবেও তাজ্জব করে দিয়েছিল। তারা ধরে নিয়েছিলেন, তারা পোল্যান্ড যাচ্ছেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে, এয়ারফোর্স ওয়ানে চেপে।

কিন্তু, এবার যে তাদের বিমানের নাম এয়ারফোর্স ওয়ান নয়, অন্যকিছু। সুপরিচিত এই ‘কল সাইন’ কেবল তখনই উচ্চারিত হয়, যখন প্রেসিডেন্ট বিমানটিতে থাকেন, অন্য সময়ে নয়।

আরও খবর:

Also Read: ইউক্রেইনে আকস্মিক সফরে জো বাইডেন

Also Read: বাইডেনের কিইভ সফরের আগে রাশিয়াকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র