“আমরা আমাদের চিপ, সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য সবকিছু আমাদের দেশেই বানাতে চাই,” বলেছেন তিনি।
Published : 14 Apr 2025, 10:52 AM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর শুল্কের হার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন, তবে এ খাতের কিছু কিছু কোম্পানি ছাড় পাবে।
চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নতুন সম্পূরক শুল্ক থেকে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার পণ্য যে ছাড় পেয়েছিল তার মেয়াদ যে ক্ষণস্থায়ী হচ্ছে, রোববার ট্রাম্পের ঘোষণায় তা-ই বোঝা যাচ্ছে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
শুল্ক আরোপ, পরে ছাড়, ফের শুল্ক আরোপের ঘোষণার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেমিকণ্ডাক্টর খাতের বাণিজ্যকে নতুন চেহারা দিতে চাইছেন বলেও অনেকে মনে করছেন।
ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে ওয়াশিংটনে ফেরার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়াতে প্রক্রিয়া সহজতর করতে চাইছেন।
“আমরা আমাদের চিপ, সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য সবকিছু আমাদের দেশেই বানাতে চাই,” বলেছেন তিনি।
নতুন শুল্ক আরোপ হলেও তাতে স্মার্টফোনের মতো কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে কিনা তা খোলাসা করেননি ট্রাম্প। যদিও বলেছেন, “আপনাকে খানিকটা নমনীয়তা দেখাতেই হবে। কারোরই এতটা কঠোর থাকা উচিত না।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে এ কথা জানানোর আগেই রোববার তিনি সেমিকন্ডাক্ট খাতে জাতীয় নিরাপত্তা বাণিজ্য তদন্তের ঘোষণা দেন।
“সামনে যে জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্ত হতে যাচ্ছে তাতে আমরা সেমিকন্ডাক্টর এবং পুরো ইলেকট্রনিক্স সরবরাহ চেইনের দিকেই নজর দিচ্ছি,” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে এমনটাই বলেছেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার হোয়াইট হাউজ ট্রাম্পের সম্পূরক শুল্ক থেকে স্মার্টফোন ও নানান ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও তা বানানোর উপকরণকে ছাড়ের আওতায় রাখলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে প্রযুক্তি খাত রেহাই পেতে পারে এবং স্মার্টফোন, ল্যাপটপসহ নানান পণ্য ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে এমন একটা আশা সৃষ্টি হয়েছিল।
রোববার ট্রাম্পের ঘোষণা তাতে জল ঢেলে দিল।
ট্রাম্পের আগে রোববার তার বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকও সেমিকন্ডাক্টরসহ চীন থেকে আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পণ্য দুই মাসের মধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
চলতি মাসের শুরু থেকে শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের একের পর এক ঘোষণা বিশ্বজুড়েই শেয়ার বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর এর মধ্যেই স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর’স (.এসপিএক্স) বেঞ্চমার্ক সূচকের ১০ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে।
লুটনিক বলেছেন, ট্রাম্প এক থেকে দুই মাসের মধ্যে স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যে ‘বিশেষ শুল্ক’ কার্যকর করবেন, পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর ও ওষুধ শিল্পে খাতভিত্তিক শুল্ক আরোপ করবেন।
নতুন এসব শুল্ক ট্রাম্পের দেওয়া সম্পূরক শুল্কের বাইরে থাকবে, যে সম্পূরক শুল্কের অধীনে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে এখন ১২৫% শুল্ক দেওয়া লাগছে।
ট্রাম্প চলতি বছর ক্ষমতায় বসার পর চীনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, সম্পূরক শুল্ক যোগ হওয়ায় এখন দেশটির যে কোনো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া লাগবে মোট ১৪৫ শতাংশ শুল্ক।
এর পাল্টায় শুক্রবার চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যে শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে।
রোববার লুটনিকের মন্তব্যের আগে চীন বলেছিল, তারা প্রযুক্তি পণ্যকে সম্পূরক শুল্কের বাইরে রাখার ঘোষণার ‘প্রভাব যাচাই’ করে দেখছে।
“বাঘের গলায় লাগানো ঘণ্টাটা কেবল সেই খুলতে পারে, যিনি সেটা লাগিয়েছেন,” সেসময় বলেছিল চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে সমর্থন জানানো বিলিয়নেয়ার বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যান নতুন এই সম্পূরক শুল্কের তুমুল সমালোচনা করেছেন।
রোববার তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি চীনের ওপর দেওয়া বিপুল পরিমাণ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে অনুরোধও করেছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক এবং কয়েক ডজন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক ধার্য করেন। গত সপ্তাহে তিনি বেশিরভাগ দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতও করে দেন।
অ্যাকম্যান এখন এই সুবিধা চীনের জন্যও চাইছেন।
ট্রাম্প যদি চীনের ওপর আরোপ করা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে সাময়িকভাবে ১০ শতাংশই বহাল রাখেন, তাহলেও তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন; মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সরবরাহ চেইন চীন থেকে সরিয়ে নিতে পারবে কোনো ধরনের বিঘ্ন ও ঝুঁকি ছাড়াই, বলেছেন তিনি।