গত সপ্তাহে মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াতের রেকর্ড দরপতন হয়। কালোবাজারে প্রতি ডলারের মূল্য ৪৫০০ কিয়াতে নেমে আসে।
Published : 04 Jun 2024, 02:39 PM
মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটির মুদ্রার পতন ঠেকানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে গত দুই দিনে স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী এবং দেশের বাইরে অবস্থিত সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের এজেন্টসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে ১৪ জন এবং অবৈধভাবে থাইল্যান্ডে কন্ডোমিনিয়াম ইউনিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত পাঁচজন আছে।
গত সপ্তাহে মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াতের রেকর্ড দরপতন হয়। দেশটির পাঁচজন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, কালোবাজারে প্রতি ডলারের মূল্য ৪৫০০ কিয়াতে নেমে এসেছে।
মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট করে দেওয়া মান অনুযায়ী এখন প্রতি ডলারের মূল্য ২১০০ কিয়াত। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের কালোবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হারের চেয়ে অনেক উচ্চমূল্যে ডলার বিক্রি হচ্ছে।
দেশটির সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার মঙ্গলবার বলেছে, “সরকার দেশের স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জল্পনা-কল্পনায় লিপ্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
তাদের এই খবরের সঙ্গে ১২ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনের কয়েকটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদপত্রটির সোমবারের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সোনার দাম অস্থিতিশীল করে তোলার অভিযোগে আরও ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বধীন নির্বাচিত সরকারকে অস্ত্রের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। তারপর থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার দেশটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিভাবে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
দশকের পর দশক ধরে সামরিক শাসনে থাকা ও মহামারীর কারণে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। সু চির দলকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর থেকেই দেশটির অর্থনীতি তেজি ভাব হারানো শুরু করে। বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচীর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটির দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও ২০২৩ সালে তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়।
দেশটির বিরোধীদলীয় ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্ট (এনইউজি) জানিয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সামরিক সরকার সামরিক ব্যয় বাড়াতে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছাপিয়ে নেয়, এতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য দেশটির জান্তা সরকারের এক মুখপাত্রকে ফোন করেছিল রয়টার্স, কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।