হামলাকারী একজন নারী, তার গুলি ছোড়ার কারণ জানতে পারেনি পুলিশ।
Published : 17 Dec 2024, 10:23 AM
যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে একটি খ্রিষ্টান স্কুলে ছাত্রের গুলিতে এক শিক্ষক ও এক কিশোর শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন; এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন।
বিবিসি লিখেছে, ম্যাডিসনের পুলিশ প্রধান শন বার্নস হামলাকারী বা তাদের লিঙ্গ পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানালেও দেশটির সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, হামলাকারী ১৭ বছর বয়সী এক নারী।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি চালানোর আগে অ্যাবান্ডেন্ট লাইফ ক্রিশ্চিয়ান স্কুলে উপস্থিত ছিলেন হামলাকারী, তাকে ঘটনাস্থলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বার্নস বলেন, “আজ শুধু ম্যাডিসনের জন্য নয়, আমাদের পুরো দেশের জন্য একটি দুঃখের দিন। আমাদের সমাজে আরও ভালো কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, পুলিশ গুলি ছোড়ার কারণ জানতে পারেনি এবং সন্দেহভাজনের পরিবার তদন্তে সহযোগিতা করছে।
বিবিসি লিখেছে, স্থানীয় সময় সোমবার বেলা ১১টার দিকে ৯১১ নম্বরে কল পেয়ে পুলিশ ওই স্কুলে যায়। গোলাগুলির আগেই হামলাকারী স্কুলে যায় বলে জানিয়েছেন বার্নস।
গোলাগুলি একটি স্থানেই সীমাবদ্ধ ছিল, তবে স্থানটি কোনো শ্রেণিকক্ষ বা হলওয়ে কি না তা স্পষ্ট নয়।
স্কুলের পরিচালক বারবারা উইয়ার্স বলেন, বন্দুকবাজি ঠেকাতে এ বছরের শুরুতে শিক্ষালয়টিতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, রিসোর্স অফিসার হিসেবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা স্কুলে নিয়োজিত না থাকলেও শ্রেণি কক্ষগুলোর দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে যে কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রথম ফটক হয়েই ভেতরে যেতে হয়।
ঘটনার সময় ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন জানিয়ে উইয়ার্স বলেন, শিক্ষার্থীরা ঘটনার পর নিজেদের সামলে নিতে পেরেছে।
"স্বভাবতই তারা ভয় পেয়েছিল। যখন তারা ‘লকডাউন, লকডাউন' শুনল, তখনই তারা বুঝে যায় ঘটনা একটা ঘটে গেছে।”
পুলিশ বলছে, স্কুলে পৌঁছানোর পর তারা একটি হ্যান্ডগানসহ একজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে। পুলিশ কোনো গুলি চালায়নি।
পুলিশ নিহতদের কারও নাম প্রকাশ করেনি এবং হামলাকারী শিক্ষার্থী সম্পর্কেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে সিবিএস নিউজসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারী একজন নারী।
ম্যাডিসনের পুলিশ প্রধান বার্নস বলেন, হাসপাতালে দুই শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আঘাত গুরুতর নয়– এমন আরও চারজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে দু'জনকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
যারা এই হামলা দেখেছেন বা এ সম্পর্কে শুনেছেন তারা যেন পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন- সেই অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা মনে করছেন, এসব বিবরণের মাধ্যমে আক্রমণকারীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ হবে।
পুলিশ কর্মকর্তা বার্নস বলেন, “এটা নিয়ে আমরা তাড়াহুড়ো করতে চাই না। আমরা শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাচ্ছি না।
"আমরা তাদের আমাদের কাছে আসার সুযোগ দিচ্ছি এবং বলার মত প্রস্তুত হলে তারা কী দেখেছে তা আমাদের জানাতে বলছি।”
তিনি বলেন, তিন মাইল দূরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তারা ঘটনার পর স্কুলে যান। এফবিআইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য ফেডারেল এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারাও সাড়া দেন।
অ্যাবানডেন্ট লাইফ খ্রিষ্টান স্কুলে কিন্ডারগার্টেন থেকে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলের তরফে এক ফেইসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, “সংকটে পড়া আমাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করুন।”
উইসকনসিনের গভর্নর টনি এভার্স বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ভুক্তভোগীদের জন্য প্রার্থনা করছেন।
রাষ্ট্রীয় ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে 'মর্মান্তিক ও বিবেকবর্জিত' বলে মন্তব্য করেছেন।
বাইডেন বলেন, “কীভাবে পড়তে ও লিখতে হয় তা আমাদের সারাদেশের শিক্ষার্থীদের শিখতে হবে। আত্মরক্ষার কৌশল তাদের শেখার কথা নয়।”
বন্দুক সহিংসতা মোকাবিলা করতে পারে এমন আইন নিয়ে অবিলম্বে কাজ করতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটে এবং স্কুলগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।
কার্যকরী গবেষণার মাধ্যমে সহিংসতা মোকাবিলায় কাজ করে আসছে কে-টুয়েলভ ভায়োলেন্স প্রোজেক্ট। অলাভজনক সংস্থাটির হিসাবে, কেবল ২০২৪ সালেই তারা তিন শতাধিক গোলাগুলির ঘটনা জানতে পেরেছে।
বার্তা সংস্থা এডুকেশন উইকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৩৮টি স্কুলে বন্দুক হামলায় নিহত বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গোলাগুলির আগে মোট ৬৯ জন হতাহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬ জন মারা গেছে।
তবে নারীদের হাতে গণহারে গুলি চালানোর ঘটনা বিরল। আর স্কুলে নারীর গুলি চালানোর ঘটনা আরও কম।
কে-টুয়েলভ স্কুল শুটিং ডেটাবেজের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড রিডম্যান গত বছর এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, স্কুল বন্দুকবাজদের বেশিরভাগই কিশোর বা ২০ বছর বয়সী পুরুষ। তবে ১৯৭৯ সাল থেকে স্কুলে অন্তত চারটি বন্দুক হামলার ঘটনায় নারী হামলাকারী ছিল।
গত বছর টেনেসি অঙ্গরাজ্যে ২৮ বছর বয়সী ট্রান্সজেন্ডার ন্যাসভিলে একটি স্কুলে গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে। হামলাকারীর ডায়েরিটি গেল সেপ্টেম্বরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়, যেখানে উঠে আসে নারী হয়ে জন্মগ্রহণ করার জন্য হামলাকারী কীভাবে যন্ত্রণা পেয়েছিল।
প্রেসবিটারিয়ান শিক্ষালয় দ্য কোভেন্যান্ট স্কুলে ওই হামলায় তিন শিক্ষার্থী ও তিন শিক্ষক প্রাণ হারিয়েছিলেন।