সমুদ্রে ভাসমান ঘাট বানিয়ে যেভাবে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

গাজায় ত্রাণ সরবরাহের সবচেয়ে দ্রুত এবং কার্যকর উপায় সড়ক পথে ত্রাণ পাঠানো বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2024, 03:47 PM
Updated : 14 March 2024, 03:47 PM

সমুদ্রে ভাসমান ঘাট তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করার যে পরিকল্পনা করেছে তা লজিস্টিক এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামারিক বাহিনীর এক হাজারের বেশি সদস্য ওই ঘাট তৈরির কাছে অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পেন্টাগন বলেছে, ওই সেনাদের কেউ ‘গাজা তীরে পা রাখবে না’।

নিজেদের এ কর্মপরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র স্বল্প পরিচিত ব্যক্তিমালিকানাধীন ফার্ম ‘ফগবো’ এর সহায়তা নেবে। সাবেক সেনাসদস্য ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে ফগবো গঠিত হয়েছে।

এই ঘাটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় একদিনে ২০ লাখ প্লেট খাবারের সমান ত্রাণ সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ বলে আগেই সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

যেভাবে ঘাট নির্মাণ ও ত্রাণ সহায়তার বিশাল এক কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র:

কিভাবে ঘাট নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্র?

গাজা উপকূলে ভাসমান ঘাট নির্মাণের সরঞ্জাম নিয়ে গত শনিবার ও সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর জাহাজ ভূমধ্যসাগরে রওয়ানা হয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, পরিকল্পনায় দুটি প্রধান উপাদান রয়েছে যা একত্রিত করা প্রয়োজন - একটি বড় ভাসমান ডক যা ইস্পাতের টুকরো দিয়ে তৈরি হবে এবং একটি দুই লেন বিশিষ্ট ৫৪৮ মিটার দীর্ঘ কজওয়ে ও ঘাট।

কজওয়েটি আন্তঃসংযুক্ত, ৪০ ফুট দৈর্ঘের স্টিলের টুকরো সংযুক্ত থাকবে এবং পথটি তীরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।

প্রথমে পণ্যবাহী জাহাজে করে ত্রাণ ডকে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখান থেকে বার্জ এবং ছোট নৌযানে করে তা ঘাটে নিয়ে যাওয়া হবে।

ঘাট থেকে ট্রাকে বা লরিতে করে পণ্য সমতলে এবং সেখান থেকে গাজার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হবে।

কজওয়েটি সমুদ্র থেকে সৈকত পর্যন্ত যাবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের গাজার ভূমিতে পা রাখতে হবে না।

গাজা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থন করছে এবং দেশটি গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে সন্ত্রাসী দল বলে ঘোষণা করেছে।

কিভাবে নিশ্চিত হবে নিরাপত্তা?

গাজায় ত্রাণ সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার সাফল্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর নির্ভর করছে বলে মনে করেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, যেহেতু গাজা এখনও একটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র। তাই সেখানে প্রাণঘাতী গোলাগুলির আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া, ত্রাণের আশায় গাজার বেসামরিকদের বড় ভিড় সৈকতে জড়ো হতে পারে। দেখা দিতে পারে বিশৃঙ্খলা, হতে পারে গোলাগুলি।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে ৩২ বছর কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মার্ক মন্টগোমেরি নিজের ত্রাণ সরবরাহের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, এই কাজ পরিচালনা করতে হলে সৈকত এবং কাছের অগভীর পানি পর্যন্ত একটি ‘নিরাপত্তা বলয়’ প্রস্তুত করতে হবে।

“আপনি বেসামরিকদের ঘাটে আসতে দিতে পারবেন না। তাদের মধ্যে মরিয়া বাবা-মা থাকবে। যারা তাদের সন্তানদের জন্য হন্যে হয়ে খাবার খুঁজছে। তারা এজন্য কাউকে হত্যা করার চেষ্টাও করতে পারে। এটা হলে এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত আছেন এমন দুইজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ‘বাইরের’ নিরাপত্তার বিষয়টি পরিচালনা করবে। যাতে গাজার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সৈকতে আসা প্রতিরোধ করা যায় এবং ওই এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। স্থানীয় এবং নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা ত্রাণ বিতরণের কাজ করবেন।

এই পরিকল্পনায় ফগবো শুধু সীমিত কিছু লজিস্টিক কাজ করবে। ত্রাণ বিতরণ কাজে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

যদিও পেন্টাগন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা গাজার ভূখণ্ডে পা রাখবে না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তবে বিষয়টি অনুসরণ করা অনেক বেশি জটিল হবে।

এই ত্রাণ সরবরাহ কতটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, অস্থায়ী এই ঘাটের মাধ্যমে গাজায় প্রতিদিন ২০ লাখ প্লেট খাবারের সমান ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করবে। যার গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের খাবারের যোগান দেবে।

বর্তমানে মিশর সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং, ইসরায়েল সীমান্তে কেরেম শালম ক্রসিং দিয়ে যে ত্রাণ গাজায় আসছে এবং আকাশ থেকে যে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে তার তুলনায় সমুদ্র পথে আসা ত্রাণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।

এ সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বর্তমানে গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করছে তা যথেষ্ট নয়। তাই সমুদ্র পথে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তিনি এও বলেছেন, সড়ক পথে ট্রাকে করে ত্রাণ সহায়তা আসার বিকল্প নেই। তাই তারা এভাবেও ত্রাণ পাঠানো অব্যাহত রাখতে চাপ দিয়ে যাবেন।