বিমান নির্মাণ কোম্পানিটি দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নিষ্পত্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে গতমাসে আদালতে জানায় বিচার বিভাগ।
Published : 24 Jun 2024, 07:08 PM
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে বোয়িং কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার সুপারিশ করেছেন কৌঁসুলিরা।
বিমান নির্মাণ কোম্পানিটি দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নিষ্পত্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে গতমাসে আদালতে জানায় বিচার বিভাগ। এরপরই মার্কিন কৌঁসুলিরা এই সুপারিশ করলেন।
বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুইজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একথা জানিয়েছেন। বোয়িংকে বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা সে বিষয়ে এখন মার্কিন বিচার বিভাগকে আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বোয়িংয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন ম্যানেজার এবং অ্যাভিয়েশন সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এড পিয়ারসন বলেন, “সত্যই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে।”
বিবিসি রেডিও ফোর টুডে প্রোগ্রামে তিনি বলেন, “বোয়িংয়ের বিমানগুলোতে সমস্যা ছিল। আমরা এগুলোতে সমস্যা দেখতে পাচ্ছিলাম। আামি ৭৩৭ ম্যাক্স এবং ৭৮৭ মডেলের বিমানের এর কথা বলছি।”
২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনাই ঘটেছিল ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমানের।
২০১৮ সালের অক্টোবরে ঘটে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমান দুর্ঘটনা এবং ২০১৯ সালের মার্চে ঘটে ইথিওপীয় এয়ারলাইন্সের বোয়িং দুর্ঘটনা। দুটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৩৪৬ জন মানুষ।
দ্বিতীয় দুর্ঘটনার পর মার্কিন বিচার বিভাগ তদন্ত শুরু করে দেখতে পায় ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ উড্ডয়নযোগ্য বলে বিমান চলাচল প্রসাশনের (ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) সার্টিফিকেট পেতে বোয়িং প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল।
এরপরই ওই তদন্তের আওতায় বিচার এড়াতে বোয়িং এবং মার্কিন বিচার বিভাগের মধ্যে গোপনে একটি বিচার মুলতবি চুক্তি (ডিফার্ড প্রসিকিউশন এগ্রিমেন্ট) হয় ২০২১ সালে।
ওই চুক্তির আওতায় বোয়িং তাদের নিম্নপদস্থ দুই কর্মচারিকে প্রতারণার জন্য দোষারোপ করে এবং মূলত এয়ারলাইন্স কাস্টমারদের জন্য ২৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়ে বিষয়টি মিটমাট করতে সম্মত হয়।
ওদিকে, সরকারও্ এর বিনিময়ে বোয়িংকে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে রেহাই দেয় এবং তিনবছরের জন্য তাদেরকে স্বচ্ছতা বজায় রাখাসহ নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শর্ত দেয়। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতারণা-বিরোধী আইন লঙ্ঘনের ঘটনা শনাক্ত করা ও তা ঠেকানোর জন্য একটি কর্মসূচিও চালুর শর্ত দেওয়া হয় বোয়িংকে।
কিন্তু গতমাসে মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, বোয়িং এই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে। তারা শর্ত মেনে চলা এবং নৈতিক কর্মসূচি পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে।
ওদিকে, বোয়িং দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গত সপ্তাহে কোম্পানিটিকে ২,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করা এবং ফৌজদারি মামলা করার অনুরোধ জানিয়েছে কৌসুলিদের কাছে।
বোয়িং কোম্পানি সম্প্রতি আবার আলোচনায় আসে এবছরের জানুয়ারিতে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের সময় ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের একটি দরজার প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনায়।
ওই ঘটনার পর বিচারবিভাগের তদন্তের পাশাপাশি নতুন আরেক তদন্ত শুরু হয়। সেখানেও বোয়িংয়ের তথ্যে ঘটতি থাকার কথা বলে বিচার বিভাগ নিষ্পত্তি চুক্তি লঙ্ঘন হয়ে থাকতে পারে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে বোয়িং কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তারা এর আগে বলছিল, ২০২১ সালের চুক্তির শর্ত তারা মেনে চলেছে। কোম্পানি চুক্তি ভঙ্গ করছে- বিচারবিভাগের এমন অভিযোগের সঙ্গে তারা একমত নয়।
বিষয়টি মিটমাট করা নিয়ে দুই পক্ষে আলোচনা চলছে এবং কর্মকর্তারা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনবেন কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। কারণ, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
মার্কিন বিচার বিভাগ ২০২১ সালে হওয়া চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে বা সংস্থাটির ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করতে পারে, যার মধ্যে জরিমানা এবং পর্যবেক্ষণের শর্ত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।